"তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখীর ঝড়।।"
নজরুল স্বয়ং ছিলেন বৈশাখের প্রতীক । তিনি নিজেই কালবৈশাখীর মত আবির্ভুত হন বাংলা কবিতায় । স্বয়ং কবি নিজেই তার বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী"তে ঘোষণা করেছেন - "আমি ধূর্জটি , আমি এলোকেশে ঝড় কালবৈশাখীর "
কালবৈশাখী বলতে আমরা দুরন্ত ঝড়কেই বুঝি । কোন গতিশীল ধবংসাত্বক বিষয়ের উপমা দিতে তাই কবিরা উল্লেখ করেন কালবৈশাখীর । নজরুল এর 'ভাষার গান' এ দেখি-
"নাচে ঐ কালবৈশাখী
কাটাবি কাল বসে কি ?"
বৈশাখ পুরাতনের বিদায় ও নবীন বরণ মাস । বৈশাখ আসে ঝড় নিয়ে, বিদায় হয় ধবংসের সহযাত্রী হয়ে । বৈশাখ সাহসী, ক্ষ্যাপা,বৈরী , অশান্ত, অসীম, মারমুখো, নির্দয়।কিন্তু তার সৃজনক্ষমতা শিল্পীর সুনিপুন সৌকর্যকে হার মানায়, তার নতুন করার পালা তার নবায়নী ধারা প্রকৃতির সকল পারক্ষমকে হার মানায়। কবিগুরু বৈশাখকে আহবান করেনঃ
"এসো হে বৈশাখ ! এসো এসো,
তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।"
আমাদের জাতীয় জীবনেও আজ এক চরম গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে।গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়া রুদ্ধ হওয়ায় মুখ থুবরে পড়েছে আইনের শাসন, ভিন্ন মত ও রাজনীতির অধিকার।অসহনীয় এ গুমোট অবস্থার প্রকাশ স্বাভাবিক ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়-
মনে হয় থমকে গেছে সময়
তবুও পাই না ভয়।
এই গুমোট আঁধার জানি ঝড়ের পূর্বাভাস
শীর্ণ পাঁজরে গুমরে মরে ক্ষুব্ধ মেঘের শ্বাস।
এই গুমোট অবস্থা চিরস্থায়ী নয়। পরিবর্তন অনিবার্য। নতুন দিন ও পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে কালবৈশাখী ঝড় আসবেই।তবুও পাই না ভয়।
এই গুমোট আঁধার জানি ঝড়ের পূর্বাভাস
শীর্ণ পাঁজরে গুমরে মরে ক্ষুব্ধ মেঘের শ্বাস।
সাত আসমান কাঁপিয়ে জানি আবার আসবে ঝড়-
সব পংকিল দূর হয়ে যাবে, ‘আবার সকাল হবে।’
সব পংকিল দূর হয়ে যাবে, ‘আবার সকাল হবে।’
বৈশাখ আসে দিন বদলের বার্তা নিয়ে। কিন্তু দিন বদলের জন্য দিল বদল জরুরী।পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজের, নিজের চিত্তের পরিবর্তন প্রয়োজন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন