শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

মদিনায় হিজরত: প্রেরণার বাতিঘর


হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িত আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির অমর কালজয়ী আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় ও পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা। 

যখন মানবতা পথ হারিয়ে ঘোর অমানিষার অন্ধকারে মুখ থুবরে পড়েছিল, তখন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে তিনি আল্লাহর নবী হিসেবে নিযুক্ত হন। সূরা আল-মুদ্দাসিরের দ্বিতীয় ওয়াহীর মাধ্যমে, আল্লাহ তাকে আদেশ দেন- "ওহে বস্ত্র আবৃত (ব্যক্তি)! উঠো, সতর্ক কর এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। " 

মূলত এ ঘোষণার মাধ্যমে পৃথিবীতে মহানবীর মিশন বা লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আর তা হলো স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব তথা সার্বভৌমত্বের ঘোষণা।

পরবর্তীকালে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন পবিত্র কুরআনের আরও কয়েকটি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র রিসালাতের এই মিশনকে আরও সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত করেন। যেমন, সূরা আস-সফের আয়াত ৯, সূরা আল-ফাতাহর আয়াত ২৮ এবং সূরা আল-তওবার ৩৩ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দেন যেন অন্য সকল দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা হয়।

আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) মানুষকে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান শুরু করেন। তিনি পৌত্তিলকতা ও দেবতাতন্ত্রের অসারতা তুলে ধরে মূলত কুরাইশ সরদারদের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। বাতিল এই সমালোচনা গ্রহণ করার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তাই মহানবী (স.) ও মুসলমানদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আল্লাহর রাসূল অত্যন্ত ধৈর্য ও পরম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি তাঁর মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। 

যারা তাঁর দাওয়াহ ইল্লাল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল, তিনি (স) তাদেরকে সংগঠিত করে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান, আখিরাতে জবাবদিহিতা, আমানাতে ধারণা, জান্নাতের জন্য আকাঙ্ক্ষা এবং জাহান্নামের ভয়ের ভিত্তিতে তাদের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে বিশ্বস্ত চরিত্রে রূপান্তরিত করেন।

আল্লাহর রাসূলের দাওয়াত ও প্রশিক্ষণের কাজ যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই মুসলমানদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর মাধ্যমে মূলত সত্যর পথে সংগ্রামীদের ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা হতে থাকে যা নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যে বিশ্বস্ত চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। এক পর্যায়ে কুরাইশদের অত্যাচার যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে এবং ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মুসলমানদের একটি দল যখন গঠন হয়ে যায়, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত করেন, যেটি ছিল ইসলামের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুকুল। মুসলমানদের এই জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে 'হিজরত' হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। 

মদীনায় হিজরত বিক্ষিপ্ত মুসলমানদের সংখ্যাগত শক্তি একত্রীকরণের প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সে সময় এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে হিজরতকে ঈমান ও কুফরের মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছিল। সূরা আল-আনফালের অনেক আয়াত, আল-নিসা এবং অনেক হাদিস এটি নিশ্চিত করে।

সত্যের পথের সংগ্রামীদের মদীনায় কেন্দ্রিভুত হওয়াকে মক্কার মুশরিকরা সহ্য করতে পারেনি। তারা মদীনায় বারবার আক্রমণ করে। হিজরতের প্রথম পাঁচ বছরে বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু এর ফলে রাসূলুল্লাহর আন্দোলন আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, মুসলমানদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। হিজরতের অষ্টম বছরে মক্কা বিজয় হয় এবং পরের দুই বছরের মধ্যে আরব উপদ্বীপে আল্লাহর দ্বীন প্রাধান্য পায়।

তাই হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারি ঘটনা। একদিকে মক্কার মুসলমানরা ইসলামের জন্য তাদের বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্বল, আত্মীয়-স্বজন তথা সর্বস্ব ত্যাগ করে ত্যাগ ও কুরবানির এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, অন্যদিকে মদীনার মুসলমানরা (আনসার বা সাহায্যকারী) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মক্কা থেকে আগত মুহাজির ভাইদেরকে আপন ভাই বলে বরণ করে নিয়ে তাদেরকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছিলেন। এটি মুসলমানদের জন্য একটি প্রেরণার বাতিঘর। তাই হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা:)-এর শাসনামলে ১৭ই হিজরী অর্থাৎ রাসুল মুহাম্মদ (সা:)-এর মৃত্যুর সাত বছর পর চান্দ্র মাসের হিসাবে হিজরী সাল প্রবর্তন করেন। 

অবশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে হিজরি বর্ষ গণনা শুরু হয়। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের সময় তা সুনির্দিষ্ট রূপে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সে সময় রাষ্ট্রীয় কাজে সন তারিখ ব্যবহৃত না হওয়ায় প্রশাসনিক সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। এ সমস্যা সমাধানকল্পে ১৭ হিজরির ১০ জমাদিউল আউয়াল হজরত আবু মুসা আশয়ারি কর্তৃক হজরত ওমরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের মজলিসে শুরায় সবার পরামর্শক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতকে ভিত্তি করে হিজরি সন গণনার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সম্মেলনের স্লোগান ছিল- ‘হিজরতের ঘটনা মিথ্যা থেকে সত্যের পার্থক্য করেছে, মক্কার অবিশ্বাসীদের ওপর ইসলামের বিজয় এসেছে।’ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনা মুনাওয়ারায় আসেন, তখন মাসটি ছিল রবিউল আওয়াল। কিন্তু মুসলমানদের হিজরতকারী প্রথম দলটি মদিনা মুনাওয়ারায় পৌঁছেন মহররম মাসে। এ হিজরত ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের শুভ সূচনা। তাই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হিজরি সনের প্রথম মাস ধরেন মহররমকে। 

হিজরতের পরিকল্পনা হয়েছিল নবুওয়াতের ১৩তম বর্ষের হজের মৌসুমে মদিনার আনসারি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে আকাবার দ্বিতীয় শপথ সংঘটিত হওয়ার পর। তখন ছিল জিলহজ মাস। তার পরের মাসই হলো মহররম। 

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ১৪টি শাকসবজি



সুস্বাস্থ্যের জন্য শাক-সবজি যে খুবই ভাল তা সর্বজন বিদিত। বেশিরভাগ শাক-সবজিতেই ক্যালোরি কম থাকে কিন্তু ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে উচ্চ মাত্রায়।

তবে, কিছু কিছু শাক-সবজির রয়েছে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-উপকারিতা, প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার কিংবা রোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষমতা এবং এসব গুণের কারণে সেগুলো অন্য সব শাক-সবজি থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত হয়ে উঠেছে।

এই নিবন্ধে আমরা সর্বোত্তম ১৪টি শাক-সবজির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করব এবং সেগুলো কেন আপনাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করব।

১. পালং শাক

পাতাবহুল এই সবুজ শাক শীর্ষস্থান লাভ করেছে তার চিত্তাকর্ষক পুষ্টির কারণে। এক কাপ (৩০ গ্রাম) কাঁচা পালং শাক আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন ‘এ’র চাহিদার ৫৬ শতাংশই যোগান দেয় এবং আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন ক চাহদিার সম্পূর্ণটাই যোগান দেয়। আর এর মধ্যে ক্যালরি রযেছে মাত্র ৭।(১)

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এক গবেষণায় পাওয়া যায়, পালং শাকের মত পাতাবহুল গাঢ় সবুজ শাকে উচ্চ মাত্রায় বিটাক্যারোটিন এবং লুইটিন রয়েছে। আর এই দুই ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।(২)

উপরন্তু, ২০১৫ সালের এক গবেষণায় পাওয়া যায়, পালং শাক খেলে রক্তচাপ কমে এবং সে কারণে এটি হৃদরোগের নিরাময়ের জন্য উপকারী।

সারাংশ: পালং শাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, কারণ এটি ক্রনিক ডিজিজের রিস্ক ফ্যাক্টর সমূহ- যেমন, উচ্চ রক্তচাপ কমায়।

২. গাজর

গাজর হল ভিটামিন ‘এ’ দিয়ে ঠাঁসা। মাত্র এক কাপ (১২৮ গ্রাম) গাজর থেকে আপনি আপনার প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া দরকার বলে সুপারিশ করা হয় তার ৪২৮% পেতে পারেন। গাজরে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা তাদেরকে উজ্জ্বল রং প্রদান করে। গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।(৫)

প্রকৃতপক্ষে, এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে গাজর ভক্ষণ করার কারণে অংশগ্রহণকারীদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫% হৃাস পায়।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, গাজর খেলে ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। যারা সপ্তাহে অন্তত একবার গাজর খান তাদের তুলনায়, ধূমপায়ীদের যারা গাজর খান না তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তিনগুণ বেশি।

গাজরে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি, ভিটামিন ‘কে’ এবং পটাসিয়ামও রয়েছে।

সারাংশ: গাজর বিশেষ ভাবে উচ্চ মাত্রায় বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যা শরীরের ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হতে পারে। এর উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফুসফুস ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩. ব্রোকলি

ব্রোকলি ক্রুসীফেরাস সবজি পরিবারের অন্তর্গত। এটি গ্লুকোসিনোল্যাট নামে পরিচিত একটি সালফার-সমৃদ্ধ উদ্ভিদ, যা গ্লুকোসিনোলোট নামক যৌগকে ধারণ করে। এছাড়াও এটি সুলফোরফেন নামেও পরিচিত। সুলোফারফেনে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রয়েছে।

প্রাণীর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সালফোরাফেন (ংঁষভড়ৎধঢ়যধহব) স্তন ক্যান্সার কোষের আকার ও সংখ্যা কমাতে সক্ষম। এছাড়া ইঁদুরের উপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ইঁদুরের দেহের টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রোকলি অন্য ধরনের দীর্ঘস্থায়ী (পযৎড়হরপ) রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।

২০১০ সালের একটি পশু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোকলির কঁচি পাতা ভক্ষণ অক্সিডেন্টের মাত্রা কমিয়ে আনে এবং এর ফলে রোগ-সৃষ্টিকারক অক্সিডেটিভ চাপ থেকে হার্টকে রক্ষা করা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও ব্রোকলিতে প্রচুর পুষ্টি পাওয়া যায়।

এক কাপ (৯১ গ্রাম) কাঁচা ব্রোকোলি আপনার দৈনিক ভিটামিন-ক’র চাহিদার ১১৬%, ভিটামিন সি’র চাহিদার ১৩৫% পূরণ হয়। এছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়াম রয়েছে।

সারাংশ: ব্রোকলি একটি ক্রুসীফেরাস সবজি যাতে রয়েছে ংঁষভড়ৎধঢ়যধহব নামক একটি যৌগ, যা ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করতে পারে। এছাড়াও এটি অক্সিডেটিভ চাপ থেকেও সুরক্ষা তৈরি করে। নিয়মিত ব্রোকলি খেলে অনেক ক্রনিক রোগের ঝুঁকি থেকেও বেঁচে থাকা যায়।

৪. রসুন

রসুনকে ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে মূল প্রাচীন চীন এবং মিশরেও রসুনের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।

রসুনের প্রধান সক্রিয় যৌগ হলো অ্যালিসিন; রসুনের বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সুবিধার মূলে রয়েছে এই উদ্ভিদ যৌগ।

বেশিরভাগ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, রসুন রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে অত্যন্ত উপকারী। এক প্রাণী গবেষণায় ডায়াবেটিক আক্রান্ত কিছু ইঁদুরকে রসুনের তেল এবং কিছু ইঁদুরকে ডায়ালাইল ট্রিসলফাইড (ফরধষষুষ ঃৎরংঁষভরফব) দেয়া হয়েছিল, যা রসুনের একটি উপাদান। এই উভয় রসুন যৌগই রক্তে শর্করা হ্রাস করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

আরেকটি গবেষণায় হৃদরোগে আক্রান্ত এবং হৃদরোগ ছাড়া উভয় অংশগ্রহণকারীদেরকে রসুন খাওয়ানো হয়। ফলাফলে দেখা যায় যে, রসুন মোট রক্ত কলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল কোলেস্টেরল হ্রাস করতে এবং পাশাপাশি উভয় দলের এইচডিএল কলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।

রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধেও যথেষ্ট উপকারী। একটি গবেষণাগারের পরীক্ষায় পাওয়া যায়, রসুনের উদ্ভিদযৌগ এলিসিন কোষ মানব লিভারের ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। তবে, রসুনের ক্যান্সার বিরোধী সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সারাংশ: গবেষণায় দেখা যায়, রসুন রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে পারে। এছাড়াও, রসুনের ক্যান্সার বিরোধী প্রভাবও রয়েছে। যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন।

৫. ব্রাসেলস স্প্রাউটস

ব্রোকলির মত ব্রাসেলস স্প্রাউটসও (ইৎঁংংবষং ংঢ়ৎড়ঁঃং) ক্রুসিফেরাস (পৎঁপরভবৎড়ঁং) সবজি পরিবারের সদস্য এবং এতে একই ধরনের স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ যৌগ বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও ব্রাসেলস স্প্রাউটে রয়েছে ক্যাম্পফেরল; এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে বিশেষভাবে কাজ করে।

একটি প্রাণী গবেষণায় দেখা যায়, ক্যাম্পফেরল ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। একটি প্রাণী গবেষণায় দেখা যায়, ক্যাম্পফেরল ফ্রি র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। ফ্রি র‌্যাডিকেল অক্সিডেটিভ ড্যামেজ ঘটিয়ে কোষের ক্ষতি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের সৃষ্টি করে।

খাদ্য হিসেবে ব্রাসেলস স্প্রাউটস আমাদের দেহের বিষমুক্তকরণ বা ডিটক্সিফিকেশন (ফবঃড়ীরভরপধঃরড়হ ) প্রক্রিয়াকেও জোরদার করে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, ব্রাসেলস স্প্রাউট খেলে আমাদের দেহে নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম বা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ ১৫-৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা মানব শরীরের ফবঃড়ীরভরপধঃরড়হ কে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এগুলো কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সাহায্য করে।

উপরন্তু, ব্রাসেলস স্প্রাউট খুব পুষ্টি-ঘন সবজি। এতে ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়াম সহ প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে।

সংক্ষিপ্তসার: ব্রাসেলস স্প্রাউটে কাইমপেরোল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কোষের অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। তারা শরীরের ফবঃড়ীরভরপধঃরড়হ জোরদার করতে সাহায্য করতে পারে।

৬. কেল (Kale)

অন্যান্য সবুজ শাকসব্জির মতো, কেল তার স্বাস্থ্যকর গুণাবলী এবং পুষ্টিঘন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য সুপরিচিত।

এক কাপ (৬৭ গ্রাম) কাঁচা কেল’র মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বি ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং তামা (পড়ঢ়ঢ়বৎ)। এতে আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন এ, সি এবং ‘কে’র সম্পূর্ণ চাহিদাও পূরণ হয়ে যায়।

উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে কেল হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের পক্ষেও অত্যন্ত উপকারী।

২০০৮ সালের একটি গবেষণায় উচ্চ কোলেস্টেরল আছে এমন ৩২ জন পুরুষকে বেছে নেয়া হয় এবং তাদেরকে প্রতিদিন ১৫০ মিলি করে ১২ সপ্তাহ কেলের রস পান করতে দেয়া হয়। ১২ সপ্তাহ শেষে দেখা যায়, তাদের শরীরে এইচডিএল কলেস্টেরল ২৭% বৃদ্ধি পায়, এলডিএল কোলেস্টেরল ১০% কমে যায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়।

আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, কেলের রস পান করলে রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।

সারাংশ: কেলে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। গবেষণায় দেখায যায় যে, নিয়মিত কেলের রস খেলে রক্তচাপ কমে যায় এবং এইচডিএল কলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।

৭. সবুজ মটরশুটি (Green Peas)

সবুজ মটরশুটিকে একটি শ্বেতসারবহুল উদ্ভিজ্জ (ংঃধৎপযু াবমবঃধনষব) হিসাবে গণ্য করা হয়। এর মানে হল এতে প্রচুর পরিমাণে কার্ব এবং ক্যালোরি আছে যা অশ্বেতসার শাক-সব্জিতে থাকে না এবং প্রচুর পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা প্রভাবিত হতে পারে। তবুও, সবুজ মটরগুলো অবিশ্বাস্যভাবে পুষ্টিকর।

এক কাপ (১৬০ গ্রাম) রান্না করা সবুজ মটরশুটিতে রয়েছে ৯ গ্রাম ফাইবার, ৯ গ্রাম প্রোটিন এবং ভিটামিন এ, সি এবং কে, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, নিয়াসিন এবং ফোলেট (ভড়ষধঃব) রয়েছে। সবুজ মটরশুটিতে উচ্চ মাত্রায় আঁশ বা ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং নিয়মিত আন্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে হজম স্বাস্থ্যকে ভাল থাকতে সাহায্য করে।

তাছাড়া, এই মটরশুটি স্যাপোনিন নামক এক ধরনের উদ্ভিদযৌগ দ্বারা সমৃদ্ধ যেগুলো তাদের ক্যান্সার বিরোধী প্রভাবের জন্য সুপরিচিত।

গবেষণায় দেখা যায়, স্যাপোনিন টিউমার কোষের বৃদ্ধির হার কমিয়ে সেগুলোর মৃত্যু ঘটায় এবং নতুন কোষের প্রবর্তন করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।

সারাংশ: সবুজ মটরশুটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজম স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এছাড়াও এতে স্যাপোনিন নামে উদ্ভিদ যৌগগুলি রয়েছে, যাতে ক্যান্সার-বিরোধী প্রভাব রয়েছে।

৮. সুইস চার্ড

সুইস চার্ডে প্রচুর মাত্রায় মানব দেহের জন্য জরুরী ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে এবং এতে ক্যালরিও অত্যন্ত কম।

এক কাপ (৩৬ গ্রাম)সুইস চার্ডে ১ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম প্রোটিন এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও কে, ম্যাংগানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। আর এই এক কাপে ক্যালরির পরিমাণ হল মাত্র ৭।

সুইস চার্ড বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছে ডায়বেটিস প্রতিরোধ এবং ডায়বেটিসজনিত কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে এর বিশেষ প্রভাবের কারণে।

প্রাণীদেহে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সুইসচার্ড নির্যাস ব্লাড সুগার লেভেল হৃাস করে ডায়বেটিস এবং ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল প্রতিরোধ করে এবং এর ফলে কোষের ক্ষতি অনেক কমে যায়।

এছাড়া ডায়বেটিসের কারণে লিভার এবং কিডনির উপরে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে সুইস চার্ডের এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সেই বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায়ও দারুনভাবে কার্যকরি বলে আরো কয়েকটি প্রাণী গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

উপসংহার: কয়েকটি প্রাণীগবেষণায় দেখা গেছে, সুইস চার্ড ডায়বেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব এবং ব্লাড সুগার লেভেল কমাতে সহায়ক।

৯. আদা

আদা হচ্ছে গৃহস্থালি রান্না-বান্নার একটি সাধারণ মশলা, যা শত শত বছর ধরে বিকল্প ঔষধ (ধষঃবৎহধঃরাব সবফরপরহব) হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এর বহু স্বাস্থ্য-উপকারিতা রয়েছ।বিশেষ করে, প্রদাহ (রহভষধসসধঃরড়হ) বা জ্বালাপোড়া কমানো এবং টেস্টোস্টেরন জোরদার করার ক্ষেত্রে এটা খুবই কাজ দিতে পারে বলে গবেষণায় জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়। ইঁদুরের উপর কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং যৌনকর্মে আদার একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর ৩০ দিনের একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, আদা টেস্টোস্টেরন এবং লিউটেনাইজিং হরমোন বৃদ্ধি করে। আরেকটি গবেষণায় ইঁদুরের টেস্টোস্টেরন প্রায় দ্বিগুণ হতে দেখা যায়। তৃতীয় পরীক্ষায় দেখা যায়, আদা খেয়ে ইঁদুরের টেস্টোস্টেরন দ্বিগুণ হয়।

মানুষের উপর পরিচালিত কয়েকটি গবেষণাতেও ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ৭৫ জন অনুর্বর পুরুষকে প্রতিদিন জিনজার সাপ্লিমেন্ট দেয়া হয়। এভাবে তিনমাস পর দেখা যায়, তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল ১৭% এবং লিউটেনাইজিং হরমোন লেভেল প্রায় দ্বিগুণ হয়। এছাড়া স্পার্ম কাউন্ট বৃদ্ধি পায় ১৬%।

কয়েকটি গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আদা বমিবমিভাব নিরাময়ে উপকারী। ১৩শ গর্ভবতি নারীর উপর পরিচালিত ১২টি গবেষণার একটি পর্যালোচনায় বলা হয়,আদা উল্লেখযোগ্যভাবে বমিভাব হৃাস করতে সক্ষম।

এছাড়া আদা’য় রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী শক্তিশালী উপাদান, যা প্রদাহজনিত অসুখ আর্থ্রাইটিস, লুপাস ইত্যাদির চিকিৎসায় উপকারী।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত কিছু লোকের অংশগ্রহণে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, আদার রস ব্যবহার করার কারণে তাদের হাঁটুর ব্যাথা সহ অন্যান্য উপসর্গ সেরে যায়।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, আদা ডায়াবেটিস চিকিৎসায়ও উপকারী।

২০১৫ সালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় আদার ব্যবহারের প্রভাব দেখতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ১২ সপ্তাহ আদার সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করায় ব্লাড সুগার লেভেল কার্যকর ভাবে হৃাস পায়।

সব সময়ই আদার গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই নিরাপদ। টেস্টোস্টেরন লেভেল ছাড়াও আদার অন্যান্য বহুবিধ উপকারীতাও রয়েছে।

উপসংহার: আদা স্বাস্থ্যবান এবং স্বাস্থ্যহীন উভয় শ্রেণির পুরুষের জন্যই উপকারী। এটি টেস্টোস্টেরন লেভেল এবং শুক্রানুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

১০. শতমূলী (অংঢ়ধৎধমঁং)

অংঢ়ধৎধমঁং সব্জি হিসাবে ব্যবহৃত একবীজপত্রী উদ্ভিদ। পুঁথির মালার মত গাঁটযুক্ত সঞ্চয়ী গুচ্ছমূলবিশিষ্ট -তাই নাম শতমূলী। শতমূলী বা অ্যাসপ্যারাগাস একটি বসন্তকালীন উদ্ভিদ যা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এটি যে কোনো খাদ্যে একটি চমৎকার মাত্রা যোগ করে।

মাত্র অর্ধেক কাপ (৯০ গ্রাম) অ্যাসোপারাগাসে এত পরিমাণ ফোলেট থাকে আপনার দৈনিক চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ প্রদান করে। এই একই পরিমাণ শতমূলী থেকে প্রচুর পরিমাণে সিলেনিয়াম, ভিটামিন ‘কে’, থিয়ামিন এবং রাইবোফ্লাভিন পাওয়া যায়।

অ্যাসপ্যারাগাস এবং এ ধরনের অন্যান্য উৎসে থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ফোলেট থাকায় এগুলো রোগ প্রতিরোধ এবং গর্ভাবস্থায় স্নায়ুতন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি সমূহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ফোলেট হল ফোলিক এসিড এবং ভিটামিন ই৯ সমন্বয়ে গঠিত বি ভিটামিনের একটি রূপ। খাবার বা খাদ্যতালিকাগত সম্পূরকগুলি থেকে দৈনিক কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট গ্রহণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ফোলিক অ্যাসিড ফোলেটের একটি রূপ যার অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। সেকারণে ফলিক এসিডের ঘাটতি জনিত এনিমিয়া চিকিৎসায় ফলিক এসিড বা ফোলেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মহিলাদেরকে ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট খেতে দেয়া হয় যাতে গর্ভস্থ শিশুর কোন স্নায়ুবিক ক্রুটি দেখা না দেয়। ফোলেট’র নিম্নমাত্রা বা লো লেভেলের কারণে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক বাচ্চা স্নায়ুবিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে বলে মনে করা হয়।

গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা যায়, শতমূলী বা অ্যাসপারাগাস আমাদের লিভার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারে; কেননা এটি আমাদের শরীরের মেটাবলিক ক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে এবং বিষাক্ততা (ঃড়ীরপরঃু) থেকেও লিভারটিকে রক্ষা করে।

সারাংশ: অ্যাসপ্যারাগাস বিশেষভাবে ফোলেট সমৃদ্ধ যা জন্মগত স্নায়ুবিক ত্রুটিসমূহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গবেষণাগারের পরীক্ষায় পাওয়া গেছে যে ধংঢ়ধৎধমঁং লিভার ফাংশন ভাল রাখে এবং বিষাক্ততার ঝুঁকি কমায়।

১১. লাল বাঁধাকপি (জবফ ঈধননধমব)

লাল বাঁধাকপি ক্রুসিফেরাস সবজি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মত এটিও এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানে ঠাসা। এক কাপ (৮৯ গ্রাম) কাঁচা লাল বাঁধাকপিতে ২ গ্রাম আঁশ বা ফাইবার ছাড়াও দৈনিক ভিটামিন ‘সি’র চাহিদার ৮৫% পূরণ করা যায়।

এছাড়াও লাল বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্থোসায়ানিন। এটি একটি উদ্ভিদ যৌগ যা এর বিশেষ ধরনের রং ধারনে অবদান রাখে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যকর।

২০১২ সালে এক প্রাণী গবেষণায় কয়েকটি ইঁদুরকে পরিকল্পিতভাবে এমন কিছু খাবার খেতে দেয়া হয়, যাতে তাদের রক্তে কোলেস্টরেল লেভেল এবং ধমনীতে চর্বির আস্তর বৃদ্ধি পায়। এরপর তাদেরকে লাল বাঁধাকপির রস খেতে দেয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, লাল বাঁধাকপির রস রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে এবং হৃদযন্ত্র ও যকৃতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।

এই ফলাফল ২০১৪ সালের আরেকটি প্রাণী গবেষণা দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। দেখা যায়, লাল বাঁধাকপি প্রদাহ কমাতে পারে এবং উচ্চ কোলেস্টেরল খাদ্য খাওয়ানো ইঁদুরের যকৃতের ক্ষতি রোধ করতে পারে।

সারাংশ: লাল বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং এ্যান্থোসায়ানিন থাকে।সুনির্দিষ্ট গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি রক্তের কোলস্টেরল লেভেল, প্রদাহ এবং হৃদরোগ ও লিভার ড্যামেজের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।

১২. মিষ্টি আলু

শিকড় জাতীয় সবজির অন্তর্গত মিষ্টি আলু তাদের স্পন্দনশীল রঙ, মিষ্টি স্বাদ এবং চিত্তাকর্ষক স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অসম্ভব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

একটি মাঝারি সাইজের মিষ্টি আলুতে ৪ গ্রাম ফাইবার, ২ গ্রাম প্রোটিন এবং ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েেেছ। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন নামক ভিটামিন এ রয়েছে। একজন মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করা প্রয়োজন তার ৪৩৮% পূরণ হয়ে যায় মাত্র একটি মিষ্টিআলু খেলেই।

বিটাক্যারোটিন কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ফুসফুস এবং স্তন ক্যান্সার।

বিশেষ ধরনের মিষ্টি আলুতে আবার অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-উপকারিতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কাইয়াপো হল একটি সাদা মিষ্টি আলু যাতে ডায়াবেটিস বিরোধী প্রভাব রয়েছে।

এক গবেষণায় ডায়াবেটিসের রোগীদেরকে প্রতিদিন ৪ গ্রাম করে কাইপো (সাদা মিষ্টি আলু) খেতে দেয়া হয়। এভাবে ১২ সপ্তাহ খাওয়ানের ফলে দেখা যায়, তাদের রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরল উভয়ের মাত্রাই হ্রাস পায়।

সারাংশ: মিষ্টি আলু উচ্চ মাত্রায় বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। রক্তের কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা হ্রাস করতেও সাদা মিষ্টি আলু কাজ করে।

১৩. কোলার্ড গ্রিনস

কোলার্ড গ্রিনস ব্রাসিকা সবজি পরিবারে অন্তর্ভুক্ত একটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ। এক কাপ (১৯০ গ্রাম) রান্না করা কোলার গ্রীনসে ৫ গ্রাম ফাইবার, ৪গ্রাম প্রোটিন এবং ২৭% ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।

অন্যান্য পাতাবহুল সবুজ সবজি যেমন ব্রোকোলি, সয়াবিনের পাশাপাশি কোলার্ড গ্রীনসও ক্যালসিয়ামের সহজলভ্যতার সর্বোত্তম উদ্ভিদ উৎস।

উদ্ভিদ উৎস থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ হাড়ের স্বাস্থ্যকে উন্নীত করতে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোলার্ড গ্রীনসে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধে অনন্য।

এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার কোলার্ড গ্রীনস গ্রহণ করলে চোখের গ্লুাকোমার ঝুঁকি ৫৭% হ্রাস পায়। গ্লুকোমা হল চোখের এমন একটি অসুস্থ অবস্থা, যা অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বেশি বেশি কোলার্ড গ্রীনস খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

সারাংশ: কোলার্ড গ্রীনস উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, যা অস্টিওপরোসিস বা হাড়-ভঙ্গুরতার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া নিয়মিত এই সবুজ শাক খেলে চোখের গ্লুকোমা এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকেও বেঁচে থাকা যায়।

১৪. ওলকপি (কড়যষৎধনর)

কোরাবি আমাদের দেশে ওলকপি নামে পরিচিত। এছাড়া ইংরেজিতে একে ঃঁৎহরঢ় পধননধমব বা এবৎসধহ ঃঁৎহরঢ় নামেও ডাকা হয়।

ওলকপি কপি পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিজ্জ যা কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁচা কোরাবি ফাইবার সমৃদ্ধ। এক কাপ (১৩৫ গ্রাম) কাঁচা কোরাবি থেকে ৫ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়া এটি ভিটামিন ‘সি’তে পরিপূর্ণ। প্রতি কাপ কোরাবি থেকে প্রতিদিনের ভিটামিন সি’র চাহিদার ১৪০% পূরণ করা যায়।

গবেষকরা দেখিয়েছেন, ওলকপির এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান একে প্রদাহ এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

বিজ্ঞানীরা প্রাণীদেহে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ওলকপির নির্যাস দিয়ে মাত্র সাত দিনের চিকিৎসায় ব্লাড সুগার লেভেল ৬৪% হ্রাস করা সম্ভব হয়।

যদিও বিভিন্ন ধরনের কোরাবি পাওয়া যায়, কিন্তু গবেষণায় দেখানো হয়, লাল রঙের কোরাবিতে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং ডায়াবেটিক ও প্রদাহ’র বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে।

সারসংক্ষেপ: কোরাবি ফাইবার এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। প্রাণী গবেষণায় দেখা যায়, কোরাবি রক্তে শর্করা হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহার: এটা সুস্পষ্ট যে, রোগ প্রতিরোধ ও ভাল স্বাস্থ্যের জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি সহ প্রয়োাজনীয় ভিটামিন ও খনিজ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে যে শাক-সবজিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল, সেগুলোর স্বাস্থ্য-উপকারিতা নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করা হয়েছে। এগুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত চমৎকার। নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনি আপনার খাদ্য তালিকার জন্য শাক-সবজির একটি ভাল মিশ্রণ পেয়েছেন, যেগুলো থেকে আপনি বহুবিধ স্বাস্থ্য-উপকারিতা ও পুষ্টির সুবিধা নিতে পারেন।

সূত্র: যৌবনের যত্ন

শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২

The mission of the Great Prophet

Muhammad Abul Hussain





Introduction


Abraham, the father of the Muslim nation, sacrificed his life to eradicate the curse of paganism and polytheism, one day the holy Kaaba was made the center of paganism and polytheism by their descendants - the Quraish of Makkah. That Abraham (pbuh) was thrown into the fiery furnace on the charge of destroying the idol; One day, his descendants placed hundreds of idols inside the Kaaba itself and turned the Kaaba into a center of shirk. The Kaaba, which was the center of Tauhid, was the place where the worship of one God and the utterance of the words of Tauhid were seen as an insult to the Kaaba. For the crime (?) of praying in the House of Allah Abu Jahl attempted to crush the head of Rasulullah with a heavy stone. The Quraysh chiefs were ambushed by the terrorists for announcing Tawheed in the courtyard of the Kaaba. How is such an incredible and unimaginable decline possible? This is possible because the great mission that Prophet Ibrahim (peace be upon him) came to earth with, the mission of his life, the great ideal he left behind was once lost among his ummah. His mission, even to his descendants, deviated from the path of ideals he had left behind.


In every age, paganism has taken a common place among the followers of the Prophet; and that is to worship a particular person or to impose divinity on an individual.Paganism takes place when the individual grows larger than the ideal. For example, in the absence of the Prophet at first, there was a relaxation in his ideals, knowledge and teachings. And devotion occupies this place. Because no knowledge is required for devotion. Who can express devotion at will.


This deviation, of course, did not happen overnight. Little by little, hundreds and thousands of years of perversion and deviation at one time incredibly led the people of Makkah to the complete opposite of their ideals. The same thing happened with Prophet Moses (peace be upon him), Jesus (peace be upon him) and other previous prophets and messengers. In all cases the same scene. In most cases, in the absence of the ideals that God's beloved servants, the prophets and messengers, have struggled to establish throughout their lives, the ummah has at one time begun to go in the complete opposite direction of the ideology they have followed. In fact, this decline took place only when the teachings and ideals of the Prophet completely departed from them. The consciousness of what mission the prophets brought to the world, what pursuit and struggle they went through was completely lost from them. Needless to say, the life style of the Prophets, the reflection of their struggling life, as long as the people were aware of it, they have no doubt followed the path shown by the Prophets.


Thus at one stage devotion became greater than idealism. The question of why and what mission the prophet brought to the world, what was his invitation, what was the main purpose of his struggle, what programs and methods were adopted by the prophets and messengers to implement the ideals became secondary to the devotees and the question of their dignity grew. . What were the prophets and messengers of Allah, were they friends or relatives (Naujubillah), were they sons or was he himself Allah (Naujubillah), at one time these questions became bigger. In this way, the Jews were able to make Allah their close relative and the Christians were able to make Isha (AS) the son of Allah by following the path of Milad, dignity and devotion rather than the way of life of the Prophets.


The same pattern has been introduced in our society at the present time as well. What mission did the Prophet Muhammad (peace be upon him) come to earth with? What was his call? From the bloodshed, for some reason the Prophet accepted the immense sacrifice of his own life and the safety of his companions, these questions have become secondary today. Instead, in mosques, mosques, house-to-house milad mehfils and waz mehfils, the statement is how great the Messenger of Allah was, how dignified he was, whether he was really a human being or a very human being in human form, whether Allah would have created this world without him.


In fact, in order to fulfill the duty of calling humanity to the path of Allah, it is necessary to first realize the mission of the Prophet. Because, any work has a goal or purpose. If we are not aware of the purpose of our work, then we will not be able to realize the rightfulness of this work, just as we will not be able to realize its significance and importance. And since the Prophet Muhammad (peace be upon him) is the ultimate believer in all matters of religion, it is necessary to know why or what mission the Prophet Muhammad (peace be upon him) came to earth to carry out. What responsibilities did he come to earth with, what was the purpose of his life, what was his ideal, what did he call people to, what was the message and content of his invitation, and what programs did the Prophet take to carry out his mission? Therefore, if he does not know what method of action he has adopted, the da'wah work is bound to turn into a mere aimless activity and the right result can never be obtained from the aimless work. Because life without a goal is like a boat without a boatman.


In the name of Islam, in the name of the ideology of the Prophet, in the name of many opinions and paths, in the multi-faceted activities of many parties and organizations can be seen in our society today. Even bombings and extremism in the name of Islam have come to the fore. But the ideology of the Prophet is one and it is very clear. Today, factionalism and violence between Islamic parties is hurting and embarrassing the Islam-loving masses, while the Messenger of God was a symbol of unity. The Aws and Khazraj tribes forgot about their perpetual tribal disputes and enmities because of their rightful adoption of the ideals of the Prophet.


The root cause of so much disunity and division among Muslims today is the inevitable consequence of deviation from Prophet's Sirat, his great way of life. If we know the mission of the Prophet properly, if we can align ourselves with his philosophy of life, then in the light of the divine ideals he brought, we too can unite like a leaden wall, bring back our golden past, bring back the honor, glory of that great nation of Muslim Ummah. And the tradition, the superiority that was declared by Allah Almighty Himself. In the Holy Qur'an, Allah Almighty declares:


كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ ۗ ١١٠


‘You are the best community ever raised for humanity—you encourage good, forbid evil, and believe in Allah. 


What was the mission of the Prophet or what responsibilities did he fulfill? As it has been described in detail in his biography or Sirat books, as well as in the books of Hadith there are detailed descriptions of every word and deed of the Prophet (peace be upon him).


However, the biggest and final document is the great book Al-Quran. The Holy Al-Quran tells in detail about the mission that Prophet Muhammad (peace be upon him) came to the world with and what the great Lord Almighty sent him to do. Therefore, we will take the word of God as the final criterion in the analysis of the life mission of the Prophet and take our discussion forward.


রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২

পবিত্র কুরআনের কয়েকটি মৌলিক বৈশষ্ট্য

ড. মুরাত কায়া

অনুবাদ: মুহাম্মদ আবুল হুসাইন





১. অবতরণ ও সংরক্ষণ


মহান আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন তাঁর সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনকে সম্পূর্ণভাবে একবারে অবতীর্ণ (নাযিল) করেননি। তিনি একে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) -এর প্রতি অল্প অল্প করে বা কিস্তিতে নাজিল করেছেন। মানুষ যাতে সহজে এবং স্বাচ্ছন্দের সাথে ঐশী নির্দেশনাকে গ্রহণ ও উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর নির্দেশকে সহজে মেনে চলে কল্যাণ লাভ করতে পারে সেজন্যেই তিনি এই পদ্ধতিতে কুরআন (ওহী) নাজিল করেছেন। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তাঁর বাণী বা ওহী ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র নিকট নাজিল করতেন। মহানবীর(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক লিপিকার ছিলেন যারা তাঁর নির্দেশ অনুসারে তাঁর উপর নাজিলকৃত ওহী সমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।


কোন কোন হিসাবে এই লিপিকারদের সংখ্যা ৬৫তে পৌঁছেছিল। যখন পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ অবতীর্ণ হতো, তখন তিনি লেখকদের মধ্যে যাদের সহজে পাওয়া যেতো তাদের ডেকে পাঠাতেন এবং নাযিলকৃত ওহী লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করাতেন। তারা সেই সময়ের লেখার সরঞ্জাম দিয়ে নাজিল হওয়া আয়াতগুলো লিখে রাখতেন, তারপর তারা সেই লেখাগুলো আবার আল্লাহর রসূলকে (সা.) পাঠ করে শুনিয়ে পরীক্ষা করাতেন।


আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাযিলকৃত আয়াতগুলো প্রথমে পুরুষদের এবং তারপর নারী সাহাবীদের কাছে পাঠ করতেন। মুসলমানরাও ওহী মুখস্থ করতেন এবং তাদের কেউ কেউ ওহীকে লিখে রাখতেন। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কোরআনের নাজিলকৃত আয়াত সমূহ পাঠ করা হতো। রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও জিব্রাইল (আঃ) পরস্পর পরস্পরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নবীজীর জীবনের শেষ বছরে তারা দুবার এ কাজ করেছিলেন। এই আদান-প্রদানের সময় কিছু সাহাবীও উপস্থিত থাকতেন এবং কুরআন তিলাওয়াত অনুসরণ করতেন। মহানবী ও জিব্রাইলের চূড়ান্ত আদান-প্রদানের পর, হুজুর (সা.), যায়েদ বিন সাবিত ও উবাই বিন কাব (রাঃ) একে অপরের কাছে কুরআন পুনঃ উদ্ধৃত করতেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই বিন কা’বকে দুবার পাঠ করে শুনিয়েছিলেন।


সর্বোপরি, আল্লাহর রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীগণ কুরআন শিক্ষার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেছেন। এভাবে, পবিত্র কুরআনকে গ্রন্থাকারে উপস্থাপনে জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল, যার প্রতিটি আয়াতের যাচাই (verified) সম্পন্ন করা হয়।


বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

ইসলাম মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে


ইসলাম সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে একটি ব্যতিক্রমী অবস্থান ও সম্মান প্রদান করেছে। নোবেল কুরআনের আয়াতে বলা হয়েছে যে:

"নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে উৎকৃষ্ট ছাঁচে সৃষ্টি করেছি।" (আট-তীন, ৯৫:৪)

“আমরা আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি; স্থল ও সমুদ্রে তাদের পরিবহন সরবরাহ করে; তাদের জন্য উত্তম ও বিশুদ্ধ জীবিকা দেওয়া হয়েছে; এবং তাদেরকে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদান করা হয়েছে আমাদের সৃষ্টির একটি বড় অংশের উপরে।" (আল-ইসরা', ১৭:৭০)

একদিন আমাদের হুজুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে একটি কফিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন। তাকে বলা হলঃ “আল্লাহর রসূল! এটা একটা ইহুদীর লাশ!” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেও কি মানুষ নয়? (বুখারি, জানাজা, ৫০; মুসলিম, জানাজা, ৮১)

দেখা যায়, আমাদের মহানবী একজন মানুষের সামনে সম্মানের সাথে দাঁড়িয়েছিলেন, যাকে মহান আল্লাহ অত্যন্ত যত্ন সহকারে সৃষ্টি করেছেন। এইভাবে, তিনি দেখিয়েছিলেন যে সমস্ত মানুষ, শুধু জীবিত নয়, মৃত ব্যক্তিরাও সম্মানের যোগ্য। ইয়ালা ইবনে মুরা বলেন:

“আমি অনেক সামরিক অভিযানে আমাদের মহামান্য নবীর সাথে ছিলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন মৃত মানুষের সাথে দেখা করতেন, তিনি অবিলম্বে তাকে দাফন করার নির্দেশ দিতেন, তিনি মুসলিম না কাফের তা জিজ্ঞেস করতেন না। (হাকিম, আমি, 526/1374)

একজন মানুষের জীবন ও আত্মা কতটা মূল্যবান যার মৃতদেহকে এত সম্মান দেওয়া হয়? পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:

"...যদি কেউ একজন মানুষকে হত্যা করে - যদি তা হত্যার দায়ে বা দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অপরাধে না হয় - তবে সে যেন সমগ্র মানুষকে হত্যা করলো; এবং যদি কেউ একটি জীবন বাঁচায়, তবে সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করলো। " (আল-মায়িদা, ৫:৩২)

এই কারণে, নিজেকে বা অন্য কাউকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং যারা তা করে তাদের জন্য অত্যন্ত কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

মহামান্য মাওলানা জালালাউদ্দিন রুমি বলেছেন:

“আমাকে যদি একজন মানুষের প্রকৃত মূল্য ঘোষণা করতে হয়, তবে আমি এবং পৃথিবী উভয়ই পুড়ে যাবে! দুর্ভাগ্যবশত, মানুষ তাদের নিজস্ব মূল্য চিনতে পারেনি এবং নিজেদেরকে কম মূল্যে বিক্রি করছে। মানুষ যখন প্রকৃতপক্ষে একটি সবচেয়ে মূল্যবান কাপড় ছিল, তখন সে নিজেকে একটি সোয়েটারের প্যাচ বানিয়েছে।" (মসনবী, ভলিয়্যুম ৩, শ্লোক ১০০০-১০০১)

ইসলাম মানবতাকে তার সম্মান ও মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অধিকারের সঠিক উত্তরাধিকারী হিসাবে দেখে। ইসলামের মতে, একজন মানুষের নিছক অস্তিত্বই তার মৌলিক মানবাধিকার পাওয়ার জন্য যথেষ্ট শর্ত। ইসলামি আইনের পণ্ডিতরা মানবতা-মানুষ হওয়ার বৈশিষ্ট্যকে মানবাধিকারের সারমর্ম হিসেবে বিবেচনা করেন। ফলে তারা একটি সর্বজনীন পন্থা অবলম্বন করেছেন এবং ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণী এবং জাতীয়তার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে কখনও বৈষম্য করেননি।

মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১

ইসলাম সব সময় সামাজিক সংহতির পক্ষে


সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ সামাজিক জীব। সে একা থাকতে পারে না। পারস্পারিক প্রয়োজনেই তারা পরস্পর ঘনিষ্ঠ হয় এবং বন্ধন স্থাপন করে। সর্বোপরি, মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সে একা তার সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। সুতরাং, মানুষের উচিত সম্প্রদায় হিসাবে একসাথে বসবাস করা, একে অপরকে সাহায্য করা এবং একসাথে সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করা। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নরূপ আদেশ করেন:

“আল্লাহর হাত (সহায়তা) সমাজের সাথে। যে ব্যক্তি সমাজ ত্যাগ করবে সে জাহান্নামের পথে যাবে।” (তিরমিযী, ফিতেন, ৭/২১৬৭)

"সমাজবদ্ধতার মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর রহমত, আর দলে-উপদলে বিভক্তির মধ্যে রয়েছে যন্ত্রণা।" (আহমদ ইবনে হাম্বল, ৪,২৭৮)

সমস্ত ইবাদত-উপাসনা যেমন জামাতে নামাজ পড়া, জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ, হজ্ব (আল হজ), যাকাত, সদকা বা মানুষের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করা, কুরবানি এবং মানবিক সম্পর্ক যেমন জানাজা অনুষ্ঠান, বিবাহ, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, ধারণ করা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক মজবুত, অভাবীদের যত্ন নেওয়া সবসময়ই সামাজিক হতে উৎসাহিত করে। অবশ্যই, কিছু সমস্যা আছে যা মানুষের সাথে যোগাযোগ করার সময় দেখা দেয়। ধৈর্য এবং সহনশীলতা মূল বিষয়। ইসলাম এমন মুসলমানদের জন্য মহান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় যারা সমাজে বসবাস করে এবং মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

আল্লাহর রাসূল সকলের সাথে সদয় আচরণ করতেন এবং অভদ্র বা নির্বোধ লোকদের দ্বারা বিরক্ত হলেও কখনো তাদের হৃদয় ভাঙতেন না। তাঁর চাচা ‘আব্বাস (আল্লাহ্‌) নবীর অবস্থার জন্য সমবেদনা অনুভব করলেন এবং বললেন:

“হে আল্লাহর রাসূল! আমি দেখছি যে লোকেরা আপনাকে বিরক্ত করছে, তারা যে ধুলো তুলছে তা দিয়ে তারা আপনাকে বিরক্ত করছে। কেন আপনি একটি বিশেষ তাঁবু স্থাপন করেন না এবং সেখানে অবস্থান করেই কেন লোকদের সাথে কথা বলেন না? প্রিয়নবী (সাঃ), যিনি সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি উত্তরে বললেন:

“না! যতক্ষণ না আল্লাহ আমাকে তাদের মধ্য থেকে নিয়ে যান এবং আমাকে প্রশান্তির দিকে নিয়ে যান আমি তাদের সাথেই থাকব। এটা কোন ব্যাপার না, তারা আমার পায়ের পাতার উপর পা রাখুক, আমার জামাকাপড় টানুক বা তারা যে ধুলো তুলছে তাতে আমাকে বিরক্ত করুক!” (দেখুন দারিমি, মুকাদ্দিমা, ১৪; ইবনে-১ শায়বা, মুসান্নেফ, সপ্তম, ৯০; ইবনে-ই সা'দ, ১৯৩)

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জাতিকেও একই উপদেশ দিয়েছিলেন:

"যে মুসলমান মানুষের সাথে থাকে এবং তাদের সৃষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে সে সেই মুসলমানের চেয়ে উত্তম যে তাদের সাথে থাকে না এবং যে কষ্ট সহ্য করা এড়িয়ে যায়।" (তিরমিযী, কিয়ামাহ, ৫৫/২৫০৭)।

ইসলাম মানুষকে একটি গতিশীল জীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দেয়, আমাদেরকে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করার, বিবাহ এবং সন্তান ধারণের জন্য, মানুষের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করতে, দান করতে, সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাতে, দুনিয়াকে পরকাল উপার্জনের জায়গা হিসাবে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়। সর্বোচ্চ স্তরে, সমস্ত মানবতার কাছে সত্য ঘোষণা করুন এবং তাদের অন্যায় থেকে দূরে রাখুন, বস্তুগত দ্রব্য, জীবন, সতীত্ব, প্রজন্মের স্বাস্থ্য এবং দেশকে রক্ষা করুন… এই উদ্দেশে যে "যে একটি ভাল কাজ করবে সে তার প্রতিফল দেখতে পাবে এবং যে খারাপ কাজ করবে সে তার প্রতিদান পাবে। প্রতিটি কাজের জন্য প্রতিদান রয়েছে যদিও কাজটি একটি পরমাণুর আকারেরও হয়,” ইসলাম জীবনকে আরও যত্ন, সক্রিয় এবং সতর্কতার সাথে সহজতর করে তোলে।

শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

ইসলাম মানুষকে আশাবাদি ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে


ইসলাম চায় মানুষ আশাবাদী হোক। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আদেশ করেন "আমার রহমত সব কিছুর উপর প্রসারিত" 

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ সমস্ত জগত ও তার মধ্যকার সবকিছু সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর আরশের উপরে থাকা কিতাবে লিখেছিলেন, 'আমার রহমত আমার ক্রোধকে জয় করে'" (বুখারি, তাওহীদ, ১৫)।

মুসলমানদের আশাবাদী হওয়ার জন্য এই বিশ্বাসই যথেষ্ট। অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য যা মুসলমানদের জীবনে সান্ত্বনা দেয় তার মধ্যে রয়েছে ক্ষমা, করুণা, ধৈর্য, ​​তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা এবং নির্ভরতা), আত্মসমর্পণ, প্রতিটি পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকা এবং মানুষের সম্পর্কে সুধারণা করা। একজন মুসলিমের দৃঢ় বিশ্বাস যে তিনি যে সমস্যা ও অসুস্থতার সম্মুখীন হন তা তার পাপমোচন করে দেয় এবং আধ্যাত্মিক স্তরকে উন্নীত করে -  যা জীবনের বোঝা হালকা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন মুসলমানের পক্ষে দু: খিত হওয়া অসম্ভব; যখন সে তার সাধ্য মত সবকিছু করে এবং তারপর বাকিটা তকদিরের কাছে আত্মসমর্পণ করে, আল্লাহর কাছ থেকে যা আসে তাতে সন্তুষ্ট হয়। এই ধরনের একজন মুসলমান পৃথিবীতে যাই হোক না কেন; নির্বিঘ্ন ও প্রশান্তিময় জীবন লাভ করে।

কাফের ও পাপীদের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাওবার দরজা খোলা থাকে। একজন ব্যক্তি বিশ্বাসের ভাঁজে আসতে পারে বা অনুতপ্ত হতে পারে যতক্ষণ না সে মৃত্যুর চিহ্ন বা বিচার দিবসের আলামত দেখতে পায়। যাই হোক, যেহেতু মৃত্যু এবং বিচারের দিন একজন ব্যক্তিকে আকস্মিকভাবে ধরে ফেলবে, তাই সুযোগ না হারিয়ে সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে যাওয়া আবশ্যক। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন:

"বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের আত্মার উপর সীমালঙ্ঘন করেছো! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেন, কারণ তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমাদের প্রভুর কাছে অনুতপ্ত হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার আগেই তাঁর ইচ্ছার কাছে মাথা নত কর, এরপর তোমাদের আর কোন সাহায্য করা হবে না।" (আজ-জুমার, ৩৯:৫৩-৫৪)

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষকে কিছু জিনিসের জন্য দুর্ভাগ্যকে দায়ী করতে নিষেধ করেছেন; তিনি আমাদের সবকিছুকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে দেখতে এবং ইতিবাচকভাবে, কল্যাণকর মনে করে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলাম মানুষের সম্পর্কে মন্দ ধারণা পরিহার করার উপদেশ দেয়। বরং আমাদের উচিত মানুষকে ভালো অনুমানের সাথে দেখা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সাধারণভাবে অন্যের ব্যাপারে আন্দাজ-অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। আন্দাজ-অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুনাহের কাজ। অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি কোরো না। কারো অনুপস্থিতিতে গীবত অর্থাৎ পরনিন্দা কোরো না। তোমরা কি মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে চাও? না, তোমরা তো তা ঘৃণা করো (গীবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সমান)। তোমরা সবসময় আল্লাহ-সচেতন থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরমদয়ালু।" (আল-হুজুরাত, ৪৯:১২)

উপরন্তু, বিশ্বাসীদের মধ্যে "স্রষ্টার জন্য সমস্ত সৃষ্টিকে সহ্য করার" মানসিকতা প্রবল। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি তারা যে ভালবাসা অনুভব করে, তার কারণে তারা অনুরাগের সাথে তাঁর সৃষ্টির কাছে যায়; তারা সবকিছুকে মহান সৃষ্টিকর্তার আস্থা হিসেবে দেখে। তাঁর কাছ থেকে আসা সবকিছুই তারা তৃপ্তির সাথে গ্রহণ করে।