রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯

ছাত্রজীবন:সাফল্যের শর্তাবলী [১]


ভূমিকা

ছোট্ট একটি শিশুর কাছে মূল্যবান কোন রতœও নিছক খেলনা মাত্র; কারণ ঐ জিনিসের গুরুত্ব তার কাছে বোধগম্য নয়; যে কারণে সে মূল্যবান রত্নটি দিয়ে কিছুক্ষণ খেলা করে হয়তো ফেলে দেবে অবহেলায়, কিংবা কোন চালাক লোক হয়তো চকলেট কিংবা কোন খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার কাছ থেকে নিয়ে নেবে দামী রতœটি। বস্তুত, দামী জিনিসের দাম যারা বোঝে না তারা সে জিনিস নিজের কাছে বেশিক্ষণ রাখতে পারে না, আবার যারা ঐ জিনিসের গুরুত্ব বোঝে তারা সেটি নিজের অধিকারে নেয়ার চেষ্টা করে থাকে।

ছাত্রজীবন যে কত মূল্যবান, তাদের এই সময়টা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা তারা নিজেরাই অনেক সময় বুঝতে পারে না। আর এই না বুঝার কারণেই তারা অত্যন্ত অবহেলায় তাদের এই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে। আর এ অবস্থাটা তখনই হয় যখন তাদের সামনে জীবনের লক্ষ-উদ্দেশ্য না থাকে, কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকে, জীবনের কোন মহৎ আদর্শের তাড়ণা তারা অনুভব না করে। এজন্য অবশ্য শুধু ছাত্র বা শিক্ষার্থীদেরকেই একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই; কারণ আমাদের দেশে এসব বিষয়ে কথা-বার্তা, লেখালেখি কিংবা গবেষণা খুব বেশি চোখে পড়ে না। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা যে আমরা তাদের সামনে তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তুলে ধরতে যেমন পারিনি, তেমনি পারিনি জীবনের কোন সুস্পষ্ট মহৎ লক্ষ-উদ্দেশ্য ও আদর্শের তাড়ণা তুলে ধরতে।
বর্তমানে ভোগবাদই যেন শিক্ষার এবং জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে। যার কারণে ছাত্ররা তাদের জীবনে কোন মহৎ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শের তাড়না অনুভব করে না বরং এই তরুণ বয়সে জীবনকে উপভোগ করার বর্ণিল আহবান ও চাকচিক্যই তাদেরকে বেশি প্ররোচিত করে, তারা সেগুলো উপেক্ষা করতে পারে না এবং সাময়িক আনন্দ ও সুখ উপভোগের জন্য ফেসবুক ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া সহ মাদকাসক্তি, পর্ণ সাহিত্য এবং নানাবিধ অনেতিক কর্মকা-ের খপ্পরে পড়ে সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে হারিয়ে যায় গড্ডালিকায়। এতে শুধু যে তাদের পড়াশোনাই নষ্ট হয় তাই নয়, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতেও তারা ব্যর্থ হয়।

এই গ্রন্থে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সময় সচেতন করার পাশাপাশি তাদের সামনে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, বিভিন্ন ধরনের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা, এর সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ, শিক্ষাজীবনে সফলতা ও ভালো ক্যারিয়ার অর্জনের উপায়, সময় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছি।

এছাড়া আমাদের এই ছোট্ট দেশটিতে যে মারাত্মক নৈতিক অবক্ষয়, সর্বগ্রাসী যে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও রাহাজানি অক্টোপাসের মত আষ্টেপিষ্টে আমাদেরকে বেঁধে ফেলেছে, তার মূল কারণ আজ উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এ অবস্থা যদি আরো অব্যাহত থাকে তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। আসলে গোড়ায় গলদ রেখে মাথায় পানি ঢেলে লাভ নেই। জাতিকে বাঁচাতে হলে জাতির ভবিষ্যতকে আগে বাঁচাতে হবে।

জাতির ভবিষ্যত নাগরিকদেরকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের সামনে জীবনের সঠিক পথ, সঠিক জীবনদৃষ্টি এবং তাদের জীবনের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। শুধু অর্থ উপার্জন, শুধু উদরপূর্তি, শুধু বৈষয়িক প্রতিপত্তি অর্জন করাই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং দেহ, মন ও আত্মিক উন্নতির বিষয়টিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মহাকবি জন মিল্টন শিক্ষাদর্শন প্রসঙ্গে বলেছেন : Education is the harmonious development of body, mind and soul.  অর্থাৎ - ‘দেহ, মন ও আত্মার সুসমন্বিত উন্নয়নই শিক্ষা।’ এই বইটিতে দেহ, মন ও আত্মার উন্নতি বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আরেকটি সমস্যা বর্তমানে আমাদের দেশ সহ সারা বিশে^ খুব প্রকট হয়ে উঠেছে, সেটি হলো ধর্মের নামে তথা পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের বিস্তার; যার প্রধান শিকার হচ্ছে ছাত্ররা। মূলত ইসলামী আদর্শ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা বা ধারণা না থাকার কারণেই কোমলমতি ছাত্ররা এই বিভ্রান্ত উগ্রবাদের সহজ শিকারে পরিণ হচ্ছে। এ গ্রন্থে জঙ্গিবাদের অসারতাও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন