রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯

ছাত্রজীবন: সাফল্যের শর্তাবলী [২]



মানবজীবনে শিক্ষার তাৎপর্য ও গুরুত্ব


শিক্ষার অর্থ
শিক্ষা হলো দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রথমে আমাদের শিক্ষা শুরু হয় নিজেদের বাড়ীতে। তারপরে, আমরা যখন বেড়ে উঠি, তখন আমরা স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাই।
শিক্ষা বলতে বুঝানো হয় একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণকে যা পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানের পরিম-লকে বিস্তৃত করে, চরিত্রের পাশাপাশি মানসিক কর্মক্ষমতাকে বিকশিত করে, যার ফলে একজন ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট আদর্শ মূর্ত হয়ে ওঠে।
শিক্ষা বলতে বিশেষ করে স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন একটি বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এবং গভীর অধ্যয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপলব্ধি অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রদান, প্রশিক্ষণ এবং পথ-নির্দেশনার নিয়মানুগ বা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াকে বুঝায়।
শিক্ষা অর্জন স্কুল-কলেজে পড়াশোনার মাধ্যমে যেমন হতে পারে; তেমনি এটি আবার বাস্তব জীবনের কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও অর্জিত হতে পারে। সহজ ভাষায়, শিক্ষা বলতে বোঝায়:
শিক্ষা প্রদানের প্রক্রিয়া
শেখার প্রক্রিয়া বা মূল্যবান কিছু জানা
নিয়মানুগ বা পদ্ধতিগতভাবে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা

শিক্ষার তাৎপর্য
সৃষ্টি জগতে পশু-পাখির মতো মানুষের স্বভাবের মধ্যেও একটি পাশবিক সত্তা রয়েছে এবং মানব-প্রকৃতির এই পাশবিক সত্তার বিকাশ পশু-পাখি ও জীব-জানোয়ারের মতই প্রাকৃতিক নিয়মে আপনা-আপনি হয়ে থাকে। পশু প্রবৃত্তি অর্জন করার জন্য কাউকেই কোন কষ্ট করতে হয় না; পশুত্ব বিনা পরিশ্রমেই অর্জন করা যায়। কিন্তু মানব শিশুকে যথার্থ ‘মানুষে’ পরিণত হতে হলে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় এবং এজন্য তাকে রীতিমত অনেক চেষ্টা-সাধনা করতে হয়।
মানুষ কোন পশুর নাম নয়। অন্যান্য জীব-জানোয়ার ও পশু-পাখির তুলনায় সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। বলাবাহুল্য সৃষ্টি জগতের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব হল তার মনুষ্যত্বের কারণে। আর মানব শিশুকে এই মনুষ্যত্ব রীতিমত অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ব হচ্ছে মানব-প্রকৃতিতে সুপ্তাবস্থায় বিদ্যমান মৌলিক মানবীয় ও সৎ গুণাবলী, তার বিবেকবোধ ও জীবনবোধ এবং তার সুকুমারবৃত্তি ও সৃজনশীলতা। এ সবের যথার্থ বিকাশের উপরই মানব সন্তানের মুনষ্যত্ব অর্জন নির্ভর করে।
আমরা দেখি মানব সন্তানকে তার জীবিকা অর্জন বা রুটি-রুজির জন্যও ব্যাপক কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়, যার দৃষ্টান্ত পশুদের মধ্যে দেখা যায় না। একজন মানুষ তার জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন্ ধরনের পেশাকে বেছে নিবে তা তার জীবনের কৈশোর কাল থেকেই নির্ধারণ করে নিতে হয় এবং সে অনুযায়ীই তাকে পড়া-শোনা ও অধ্যয়ন করতে হয় এবং হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। এই দৃষ্টান্ত পশুদের মধ্যে দেখা যায় না। পশুরা বনে-বাদারে ঘুরে-ফিরে কিংবা অন্যের কাছ থেকে কেড়ে-কুড়ে, নিজের হিংস্র নখ ও দাঁত দিয়ে অপরকে হত্যা করে নিজেদের উদর পূর্তি করে থাকে। কিন্তু জীবিকা নির্বাহের এই পন্থা মানুষের জন্য শোভনীয় নয়; কেননা তাতে মনুষ্যত্বের অবমাননা হয়। অবশ্য মানুষের মধ্যেও কিছু কিছু মানুষকে দেখা যায়, যারা পশুদের মতই জোর করে অন্যের সম্পদ কেড়ে নেয়, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি করে কিংবা অন্য কোন অসৎ উপায়ে অন্যের সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজের উদর পূর্তি করে কিংবা সম্পদের পাহাড় গড়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের মানুষকে মানব সমাজের অন্য সকল মানুষই ঘৃণা করে থাকে এবং মনুষ্য সমাজে তারা ইতর বা মানুষরূপী পশু হিসেবেই পরিগণিত হয়। 
সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। মানুষের থাকা, খাওয়া, জীবন-যাপণ সবই পশুদের তুলনায় উন্নত ও মর্যাদা সম্পন্ন। এ কারণেই পশু-পাখিকে খাদ্য সংগ্রহ ও জীবীকা সংগ্রহের জন্য বিশেষ কোন শিক্ষা-দীক্ষা ও মূল্যবোধের প্রয়োজন না হলেও মানুষকে তার জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে তার মনুষ্যত্বের মর্যাদা ও আভিজাত্য বজায় রাখতে হয় এবং এজন্য বিশেষ ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।
আবার মানুষ শুধু খেয়ে-পড়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না, সে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা কৌতুহল বোধ করে, তার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন এসে ভীড় করে। কারণ মানুষ একটি বুদ্ধিমান সত্তা। এ কারণে জীবন ও জগতের রহস্য সে উন্মোচন করতে চায়, জানতে চায়, বুঝতে চায়। এসব কারণে শুধুমাত্র কর্মমুখী শিক্ষাতেও মানুষ সন্তুষ্ট নয়, জগতের নানা বিষয়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানও তাকে আয়ত্বে করতে হয়। 
আবার মানুষ কেবলমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণীই নয়, তার একটি নৈতিক ও সামাজিক সত্তাও রয়েছে। সে সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে ভালোবাসে এবং সমাজ ও মানুষের প্রতি একটি দায়বদ্ধতাও সে অনুভব করে। এ কারণে মানব সন্তানকে তার নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কেও জানতে হয় এবং নিজ সমাজ ও রাষ্ট্রের একজন আদর্শ, সৎ ও যোগ্য সদস্য ও নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার একটি তাড়নাও সে অনুভব করে।
এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে মানব শিশুকে যথার্থ মানুষ হয়ে উঠতে হলে তাকে অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে হয় এবং নিজের ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর করার লক্ষে জীবনের একটি বিরাট সময় পর্যন্ত তাকে জ্ঞান অর্জন ও আত্মগঠনের কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়ে নিয়োজিত থাকতে হয়। বলাবাহুল্য, এই কঠোর অধ্যবসায় ও সাধনার মাধ্যমে সত্যিকার মানুষ হয়ে ওঠার মধ্যেই মানব সত্তার শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার বিশেষত্ব ও সার্থকতা নিহিত। 
চলব-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন