
ডিসিপ্লিন (Discipline) শব্দটির অর্থ শৃংখলা বা নিয়ম মেনে চলা। আভিধানিক অর্থে ডিসিপ্লিন বা শৃংখলা বলতে বুঝায়:
কোন প্রশিক্ষণের অনুশীলন বা চর্চা করা; কোন ব্যক্তিকে পূর্ব নির্ধারিত কোন আচরণ বিধি বা নিয়ম-নীতি মেনে চলতে সাহায্য করা এবং পথ-নির্দেশ প্রদান করা,
যখন কোন ব্যক্তি পূর্ব-নির্ধারিত কোন নিয়ম ভঙ্গ করে তখন তাকে শাস্তি প্রদান করা বা তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা,
কোন ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গ্রহণকৃত কার্যপদ্ধতি যাতে সে স্বেচ্ছায় বা স্বতস্ফূর্তভাবে নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে উৎসাহিত হয়
কোন নিয়ম বা শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য বাধ্যগত আনুগত্য বা শাসিÍমূলক ব্যবস্থা
শৃংখলার গুরুত্ব
জীবনের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি পদক্ষেপেই শৃংখলা প্রয়োজন। আর ছাত্রজীবন বা শিক্ষাজীবনে এটি আরো বেশি প্রয়োজন। কেননা, যে কোন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রথম শর্ত শৃংখলা বা নিয়ম মেনে চলা। শৃংখলা হলো শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতিগত উপায়, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আচরণবিধি বা সঠিক নিয়ম অনুসারে শিক্ষাগ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়।
জীবনে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হবে এবং প্রত্যেক কাজেরই একটি নিয়ম বা শৃংখলা রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি সেই নিয়ম-শৃংখলা না জানি তাহলে কীভাবে কাজ করবো? এ কারণে আমাদের কিছু নিয়ম এবং পদ্ধতির সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। এই নিয়ম-শৃংখলাগুলো আমাদেরকে পথনির্দেশনা দিবে এবং এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। আর এই এগিয়ে যাওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা আমাদের কাজগুলো ভালোভাবে এবং সঠিক নিয়মে করতে সক্ষম হবো।
যে কোন কর্মক্ষেত্র বা সামষ্টিক কর্মকা-ে সবাইকে একটি ডিসিপ্লিন বা শৃংখলা মেনে চলতে হয়। এমন কোন প্রতিষ্ঠান কি আছে, যেখানে কোন শৃংখলা নেই, জবাবদিহিতা নেই? যদি এমন হয় যে কেউ কারো ধার ধারেনা, প্রত্যেকেই নিজ নিজ খেয়াল-খুশি মত যা খুশি তাই করছে, তাহলে কী হতো? তোমাদের টীম কি গোল দিতে পারবে, যদি প্রত্যেকেই অনবরত লাথি মারতে থাকে?
তোমাদের পরিবার কি সুখি হতে পারবে, যদি প্রত্যেকে যার যার ইচ্ছা মতো চলতে থাকে? আত্মগঠন বা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রেও তুমি তখনই ভালো করতে পারবে, যখন তুমি শৃংখলা মেনে বা নিয়ম অনুসরণ করে তোমার জীবনকে পরিচালনা করবে। যদি তা না করো, তাহলে তুমি ব্যার্থ হবে। অর্থাৎ তোমার সাফল্য নির্ভর করছে শৃংখলার উপর। ডিসিপ্লিন হচ্ছে নিয়ম মেনে কাজ করা, এছাড়া আর কিছু নয়।
সুতরাং, প্রত্যেকটা জায়গাতেই শৃংখলা প্রয়োজন। আর শৃংখলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটা হলো আনুগত্য করা বা আদেশ মেনে চলা। আর আদেশ পালন হলো শর্তহীন। তুমি প্রশ্ন করতে পারবে না যে কেন অথবা কীভাবে। তোমাকে অবশ্যই নিয়ম-শৃংখলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তোমাকে অবশ্যই নির্দেশ মানতে হবে, যদি তা ভূলও হয়।
এই যে তুমি ফুটবল খেলো বা ক্রিকেট খেলো, সেখানেও কিন্তু তোমাকে খেলার নিয়ম-কানুনগুলো জানতে হবে এবং অবশ্যই যথাযথভাবে তা মানতে হবে। যদি না মানো, তাহলে কি হবে, তুমি কি খেলতে পারবে? যখন হুইসেল দেয়া হবে, তখন অবশ্যই তোমাকে খেলা বন্ধ করতে হবে। আবার হয়তো হুইসেল দেয়া হবে খেলা শুরু করার জন্য, তোমাকে খেলা শুরু করতে হবে। তুমি এসব হুইসেলের মানে না জানো এবং যদি যথাযথভাবে ফলো না করো, কিংবা যদি অন্য কোন ফাউল করো, তোমাকে হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করা হবে, অথবা লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হবে।
এমনিভাবে কোন স্কুল বা কলেজও চলতে পারবে না যদি স্টুডেন্টরা টিচারদের কথা না শোনে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শ্রেণীকক্ষে অবশ্যই নিরব বা শান্ত থাকতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই শিক্ষক/শিক্ষিকাদেরকে সম্মান করতে হবে হবে। তারা ক্লােেস চেচামেচি বা হৈ-হুল্লোর করতে পারে না, কিংবা ঝগড়া বা মারামারি করতে পারে না। তাদেরকে অবশ্যই পড়াশোনায় মনোযোগী ও যত্নবান হতে হবে এবং যথাসময়ে ক্লাসে আসতে হবে। আর এসব নিয়ম-শৃংখলাগুলো তাদের শিক্ষা গ্রহণের কাজটিকে ভালোভাবে করতে সাহায্য করবে। শৃংখলা কিন্তু তাদের স্বাধীনতাকে হরণ করে না; এটি শুধু তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভালো ব্যবহার করতে শিক্ষা দেয়, যার মাধ্যমে টিচারদের পক্ষে শিক্ষা প্রদানের কাজটি ভালোভাবে, সুন্দরভাবে চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের শিক্ষাজীবনে ভালো আচার ব্যবহার শিখতে ব্যার্থ হয়, শৃংখলা ও আনুগত্য শিখতে ব্যার্থ হয়, তাহলে কি তাদের পক্ষে রাষ্ট্রের সুনাগরিক হওয়া সম্ভব?
রাষ্ট্র তো দূরের কথা, শৃংখলা না থাকলে একটি ছোট পরিবারেও শান্তি থাকে না। একটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই পরিবার প্রধানকে মেনে চলতে হয়। তার কথা মতো চলতে হয়। যদি না শোনে, তাহলে পরিবারের আনুগত্য-শৃংখলা নষ্ট হয়। এর ফলে সেখানে আর শান্তি থাকেনা। কেননা, শৃংখলার কারণেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মায়া-মমতা আর ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকে এবং তখন পরিবার হয়ে ওটে শান্তির নীড়। কিন্ত শৃংখলার অভাবে এটি জঙ্গলে পরিণত হয়।
শৃংখলার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো সেনাবাহিনীতে। এমন শৃংখলা তুমি আর কোথাও দেখতে পাবে না। সেখানে একজন সৈন্যকে অন্ধভাবে তার উর্ধতন অফিসারের নির্দেশ পালন করতে হয়। কমান্ডারের নির্দেশে তাদেরকে এমনকি ভয়ানক বিপদের মধ্য দিয়েও এগিয়ে যেতে হয়। কমান্ডার যখন নির্দেশ দেন তখন সৈন্যরা বলতে পারে না কেন। তাদের একমাত্র কাজ হলো নির্দেশ পালন করা এবং মৃত্যুকে বরণ করে নেয়া। একজন সৈন্য কখনো উকিলের মত নয়। উকিলের কাজ হলো কোন কিছু পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি পেশ করা বা তর্ক করা। কিন্তু সৈন্যকে বিনা বাক্য ব্যায়ে নির্দেশ পালন করতে হয় এমনকি সেই নির্দেশ যদি ভুল হয় তবুও। যদি সে এমনটা করতে ব্যার্থ হয়, তাহলে তার দেশ নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে।
চলবে-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন