শৃংখলা হচ্ছে লক্ষ্যে পৌছার জন্য নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা নিয়ম মেনে চলা। আর এই নিয়ম মেনে চলা বা আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখার সর্বোত্তম সময় হলো ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো আত্মগঠন এবং শিক্ষাজীবনে সফলতা লাভ। এই দুটো মৌলিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শৃংখলা বা আত্মনিয়ন্তণের দক্ষতা একান্ত অপরিহার্য। বিশেষ করে, ছাত্রজীবন বলতে যেহেতু তারুণ্য দীপ্ত একটি দুর্বার সময়কালকে বুঝায়, যে সময়কালে মানুষ প্রকৃতগতভাবে একটু তেজোদীপ্ত থাকে, বন্ধনহীন দুরন্তপনাই যে সময়ের বৈশিষ্ট্য; সেই তেজোদীপ্ত তারুণ্যকে বশে এনে জ্ঞান সাধনা ও আত্মগঠনে মগ্ন করতে হলে শৃংখলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখানে আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
১. অধ্যয়নে মনোনিবেশ করা
ছাত্রজীবনে তরুণ-তরুণীদের মনে আবেগের তীব্রতা বা চিত্ত চাঞ্চল্য বেশি থাকায় এই সময়টাতে তাদের উচ্ছৃংখল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ অবস্থায় অধ্যয়নে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আবেগ ও উচ্ছৃংখতাকে বশে এনে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হলে শৃংখলা মেনে চলা জরুরী। আবার শৃংখলা শেখার এবং জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রজীবনই হচ্ছে আদর্শ সময়। এই সময়ে যে কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা থাকে তা অন্য সময়ে থাকে না। তাই এটিই হচ্ছে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে থাকার তথা আত্মগঠনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
২. সময়সূচি মেনে চলা
সময় মত সব কাজ করা হচ্ছে শৃংখলাবোধের অন্যতম প্রধান শর্ত। আর ছাত্রজীবনে এর অনুশীলন করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তুমি যদি তোমার অধ্যয়নের সব কর্মসূচি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে চাও তাহলে তোমাকে সময় মত সব কাজ করার অভ্যাস করতে হবে। যদি তা না পারো তাহলে তোমার পড়াশোনা ঠিক মত হবে না, তুমি নিয়মিত ভাবে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না, অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কারণ, তুমি যদি কোন একটি কাজও সময় মত করতে না পারো, তাহলে তার প্রভাব পরবর্তী কর্মসূচিগুলোর উপর পড়বে, বাকি গুলোও তুমি সময়মত ও যথাযথভাবে করতে পারবে না, তোমার কাজ শুধু জমা হতেই থাকবে। তাছাড়া তুমি সময় মত পরা শেষ না করলেও পরীক্ষা কিন্তু সময় মতই হবে, তোমার জন্য অপেক্ষা করবে না। সুতরাং সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার অভ্যাস কর, এটি শুধু তোমার ছাত্রজীবনের জন্যই নয়, সারা জীবনের জন্যই অপরিহার্য।
৩. শৃংখলা সফলতার পূর্ব শত
যারা সুশৃংখল, তারা সব কাজেই সফল। আর যারা উচ্ছৃংখল, তারা সব কাজেই বিফল। যারা পড়াশোনায় মনোযোগী নয়, যারা সময় মত কাজ সম্পন্ন করতে পারে না, তারা সব কাজে পিছিয়ে পড়ে। এর ফলে তারা নিজেরা যেমন পেরেসানি ও আত্মবিশ^াসের অভাবে ভোগে, তেমনি অন্যরাও তাদের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারে না। অন্যদিকে যারা সুশৃংখল তারা নিজেরা যেমন আত্মপ্রত্যয়ী হয়, তেমনি অন্যরাও তাদের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারে।
৪. শৃংখলা জীবনকে পচ্ছিন্ন ও সুন্দর করে
আগেই বলেছি, ছাত্রজীবন হলো আত্মগঠনের সময়। পরিচ্ছন্নতাবোধ হলো জীবনের সৌন্দর্য বা নান্দনিকতার অন্যতম দিক। এটি যেমন নিজের জীবনকে সুন্দর করতে সাহায্য করে, তেমনি পরিবেশকেও সুন্দর করে তোলে। আর এই পরিচ্ছন্নতাবোধ নির্ভর করে নিয়ম মেনে চলা বা শৃংখলার উপর। ছাত্রজীবনে যারা সুশৃংখল তারা নিজেদের বাড়ী বা ছাত্রাবাস যেখানেই থাকে সেখানেই তাদের পরিচ্ছন্নতাবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। নিজের পড়ার টেবিল, বিছানাপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, টয়লেট, বাথরুম সবকিছুই থাকে গোছানো ও পরিচ্ছন্ন। অন্যদিকে যারা উচ্ছৃংখল তারা নিজেরা যেমন নোংরা থাকে, নিজের ঘর-পরিবেশকেও নোংরা করে রাখে।
৫. সৎ গুণাবলীর বিকাশ
অযথা রাত জেগে না থেকে সময় মত ঘুমাতে যাওয়া আবার ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ভাল মত পরিচ্ছন্ন হয়ে নামাজ-কালাম পড়া, শরীর চর্চা করা, সকাল সকাল পড়তে বসা, সময় মত নাস্তা করা, স্কুল-কলেজে যাওয়া ইত্যাদি ভাল গুণাবলির বিকাশ শৃংখলাবোধ, সময় বা নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস ছাড়া সম্ভব নয়। আর ছাত্রজীবনেই এসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়।
৬. ব্যক্তিত্বের বিকাশ
নিয়ম মেনে চলা, সময় মত সব কাজ করতে পারা বা ওয়াদা রক্ষা করা, পরিচ্ছন্নতাবোধ-এসব গুণাবলী ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এসব গুণাবলী শুধু ছাত্রজীবনের জন্যই নয়, সারা জীবনের জন্যই অপরিহার্য। কিন্তু এসব গুণের লালন ও বিকাশের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ছাত্রজীবন। যারা ছাত্রজীবনে এসব গুণাবলী অর্জন করতে পারে না তাদের পক্ষে বাকী জীবনেও এসব অর্জন করা আর সম্ভব হয় না। কারণ, মানুষের জীবনে অভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ছাত্রজীবনে ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে না পারলে কর্মজীবনে তা আর সম্ভব হয় না।
৭. চাপ কমায়
নিয়মানুবর্তিতা মানসিক চাপ কমায়। যেমন তুমি যদি আলস্য না করে সময় মত তোমার হোমওয়ার্ক/এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে রাখো, তাহলে ক্লাশে ও পরীক্ষার সময় তোমার আর কোন টেনশন থাকবে না। আবার তুমি যদি অযথা রাত জেগে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি কর, তাহলে তোমার ক্লাস বা পড়া মিস হতে পারে। কিন্তু তুমি যদি নিয়ম মেনে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাও তাহলে তুমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সময় মত সব কাজ ঠিকঠাক করতে পারবে।
৮. ভাল গ্রেড/ফলাফল লাভ
তুমি যদি নিয়ম মেনে সময় মত পড়াশোনা কর, নিয়মিত ক্লাস কর, নিজের প্রতি যতœ কর, তাহলে অবশ্যই তোমার রেজাল্ট ভাল হবে। আর এটাই তো ছাত্রজীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু তুমি যদি সময় মত পড়া শেষ না কর, নিয়মিত ক্লাস না কর, তাহলে পড়াশোনায় তুমি পিছিয়ে পড়বে এবং তোমার রেজাল্ট খারাপ হবে। এর ফলে তোমার স্টুডেন্ট লাইফটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এভাবে চিন্তা করলে তুমি নিজেও ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতার আরো অনেক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে। মূল কথা হচ্ছে, ভাল কিছু পেতে হলে তোমাকে সাধনা করতেই হবে। আর এই সাধনাই হলো শৃংখলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন