সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

ইসলাম ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গণ্য করে


সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন মানুষকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করার ক্ষমতা বা বিবেক দিয়েছেন। সেই সাথে তিনি তাদেরকে সঠিক ও ভুল পথের নির্দেশনাও (হেদায়েত) প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তাদেরকে তিনি চিন্তা ও ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কখনই তাদের স্বাধীন ইচ্ছায় হস্তক্ষেপ করেননি। প্রত্যেকে তাদের ইচ্ছার স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে ভাল বা মন্দ সিদ্ধান্ত নির্বাচন করবে এবং তারপর তাকে তার সেই কাজের পরিণতি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

''হে নবী যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন, তবে পৃথিবীর সকল মানুষ অবশ্যই ঈমান আনত, তোমরা যারা পৃথিবীতে আছ তাদের প্রত্যেকেই! তাহলে কি তুমি মানবজাতিকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঈমান আনতে বাধ্য করবে?'' (ইউনুস, ১০:৯৯)

"যার ইচ্ছা সে বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক" (আল-কাহফ, ১৮:২৯)

“যদি তোমরা (আল্লাহকে) প্রত্যাখ্যান কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই; কিন্তু তিনি তাঁর দাসদের কাছ থেকে অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না: যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট।" (আজ-জুমার,৩৯:৭)

জাহেলিয়াতের যুগে, যেসব কুরাইশ মহিলার শিশুরা শৈশবে কঠিন অসুস্থতার সম্মুখীন হ’ত তারা এই মানত করতেন, "আমার সন্তান বেঁচে থাকলে আমি তাকে ইহুদি বানাবো।" এ কারণে বনু নাদির ইহুদি গোত্রকে যখন মহানবীর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে মদিনা শহর থেকে নির্বাসিত করা হচ্ছিল, তখন তাদের মধ্যে নতুন মুসলমানদের ইহুদি সন্তানও ছিল। এই শিশুদের মুসলিম আত্মীয়রা বলছিলেন: "আমরা আমাদের সন্তানদের ছেড়ে দেব না (আমরা তাদের জোর করে ধরে রাখব এবং মুসলিম হতে বাধ্য করব)।" এর ফলশ্রুতিতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আয়াতটি নাযিল করেন “ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই”।

ইসলাম নিজেকে জোর করে মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চায় না। এই কারণে, এটি সব ধরনের আরোপ এড়িয়ে চলে। এমনকি এটি বুদ্ধিবৃত্তিক জবরদস্তি থেকেও দূরে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, অলৌকিক ঘটনা ইসলামের প্রসারের অন্যতম প্রধান উপায় ছিল না। মহানবীর কাছে বিস্ময়কর ঘটনা ভিত্তিক অলৌকিক ঘটনার দাবিকে স্বাগত জানানো হয়নি। যেহেতু ইসলাম এমন এক যুগের সাথে মিলেছিল যখন মানবজাতি ছিল পরিপক্ক, তখন ইসলাম মানুষের বুদ্ধি এবং মনের সাথে কথা বলেছিল কুরআনের বাচনিক অলৌকিকতার দ্বারা। এটি যুক্তিবাদী নিয়ম এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের মাধ্যমে মানুষকে নিজের সাথে আবদ্ধ করেছে। এই কারণে এটি কখনই বস্তুগত শক্তিকে উপায় হিসাবে ব্যবহার করেনি।

বিখ্যাত ইংরেজ ইতিহাসবিদ ফিলিপ মার্শাল ব্রাউন লিখেছেন, "যদিও তারা মহান মহান বিজয় অর্জন করেছিল, তুর্কিরা সদয়ভাবে বিজিত দেশগুলির জনগণকে তাদের নিজস্ব রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য অনুসারে স্ব-প্রশাসনের অধিকার দিয়েছিল।"

১৭৯৮-১৭৯৯ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যখন অটোমান সাম্রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন, তখন তিনি ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ায় বসবাসকারী আর্মেনীয়দের বিদ্রোহী করতে চেয়েছিলেন। তখন ইস্তাম্বুলে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সেবাস্তিয়ানি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছিলেন: "আর্মেনিয়ানরা এখানে তাদের জীবন নিয়ে এতটাই সন্তুষ্ট যে তাদেরকে বিদ্রোহী করে তোলা অসম্ভব।"





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন