মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের সম্পর্ক



আসুন নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির কয়েকটি দিক বিবেচনা করা যাক

ইসলামী পারিবারিক দৃষ্টিতে নারীকে মা পুরুষকে পিতা হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এটি এমন একটি অংশীদারিত্ব যেখানে পুরুষ এবং মহিলা সমান দায়িত্ব ভাগ করে নেয় এবং সমান অধিকারের অধিকারী হয়

ইসলাম মুসলমানদেরকে জ্ঞান সন্ধান করার জন্য নির্দেশ দেয় এবং ব্যাপারে পুরুষ নারীর মধ্যে কোন বেষম্য করে না চৌদ্দ শতাব্দী আগে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: "জ্ঞানের অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ" এর অর্থ পুরুষদের মতোই শিক্ষার অধিকার নারীদেরও রয়েছে

পুরুষের মতো নারীরও রয়েছে মত প্রকাশের সমান স্বাধীনতা তাদের মতামত গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয় এবং উপেক্ষা করা হয় না

কুরআন ইতিহাসে বর্ণিত আছে, কেবল নিজের মতামত নির্দ্বিধায় প্রকাশ করাই নয়, বরং নারীরা আল্লাহ রাসূল অন্যান্য মুসলিম নেতাদের সাথেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যুক্তি-তর্ক অংশগ্রহণ করতেন (আল কুরআন, ৫৮: -; ৬০: ১০-১২)

নবীর সময়ে, নারীরা সমাজকর্মে বিশেষত জরুরি অবস্থার সময়ে অংশ নিতেন তারা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে যোদ্ধাহতদের সেবা-শুশ্রুসা সরবরাহ প্রস্তুত করতেন তারা লোহার বারের পিছনে বন্ধ ছিল না বা মূল্যহীন "প্রাণহীন সৃষ্টি" হিসাবে বিবেচিত হয়নি, যেমনটি মধ্যযুগীয় সময়ের খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদদের ধারণা ছিল

ইসলাম নারীদেরকে নিজস্ব অধিকারে সম্পত্তি ক্রয়, মালিকানা লাভ বা বিক্রয় করার সমান অধিকার প্রদান করে তাদের জীবন, তাদের সম্পত্তি এবং তাদের সম্মান পুরুষদের মতই পবিত্র যদি তারা কোনও অপরাধ করে তবে তারাও পুরুষদের মতই একই ধরণের দন্ড ভোগ করবে; এক্ষেত্রে কোন ধরনের  কম বা বেশি করার সুযোগ নেই যদি তাদের প্রতি অন্যায় করা হয় বা ক্ষতি করা হয়, তবে তারা তাদের অবস্থানের পুরুষদের সমতুল্য ক্ষতিপূরণ পাবে (কোরআন : ১৭৮; : ৪৫, ৯২-৯৩)

ইসলাম পুরুষদের মতো নারীদেরও উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অংশীদারিত্ব প্রদান করে ইসলামের পূর্বে মহিলারা কেবল অংশীদারিত্ব থেকেই বঞ্চিত ছিল না, বরং তারা নিজেরাও পুরুষদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হত কিন্তু ইসলামী উত্তরাধিকার ব্যবস্থায় নারী স্ত্রী বা মা, বোন বা কন্যা যাই হোন না কেন, তিনি মৃত আত্মীয়ের সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ পান, যা মৃতের সাথে তার সম্পর্কের নৈকট্য এবং উত্তরাধিকারীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে এই অংশীদারিত্ব তাঁর নিজস্ব এবং কেউই এটিকে কেড়ে নিতে বা বিশৃঙ্খল করতে পারে না

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পিতার সম্পত্তিতে ভাইদের তুলনায় বোনেরা অর্ধেক অংশীদারিত্ব পায় যা প্রথম নজরে অন্যায় বলে মনে হতে পারে তবে এই বাস্তবতাও বিবেচনা করা প্রয়োজন যে, ইসলাম কোনও নারীর উপর সে ধরনের আর্থিক বোঝা চাপায় না যেমনটা কোনও পুরুষের উপর চাপানো থাকেউদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি পরিবারের পুরো ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব অর্পিত থাকে পিতা অথবা স্বামী' উপর

এমনকি, নারীর নিজের বা তার বাচ্চাদের খরচ জোগানোর দায়িত্ব কখনও নারীর উপর থাকে না এমনকি তিনি মা বা স্ত্রী না হলেও তার রক্ষণাবেক্ষণ করা নৈকট্য অনুসারে তার সাথে সম্পর্কিত পুরুষদের দায়িত্ব সুতরাং যে স্ত্রী পিতার সম্পদের কিছু অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় তা তার স্বামী, সন্তান বা তার নিজের জন্যও ব্যয় করা তার কর্তব্য নয় তবে তিনি এটি স্বেচ্ছায় কাউকে দান করতে চাইলে করতে পারেন তিনি তার অংশ দাতব্য হিসাবে দান করতে পারেন এটা তাঁর বিশেষ অধিকারসুতরাং এখানে নারীদের উপর কোনও অবিচার করা হয় না

ইসলাম বিবাহের সময় নারীকে মাহর নামক যৌতুক পাওয়ার অধিকারও প্রদান করে, যা পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য নয় এই মাহর এমন অর্থ বা সম্পত্তি যা বিবাহের সময় বরের পক্ষ থেকে কনেকে উপহার হিসেবে প্রদান করতে হয়এই উপহার একান্তভাবে কনেরই প্রাপ্য, তার পরিবার বা অন্য কেউ নয়

এটি নারীর অধিকার যে, স্বামী তার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবেন এবং তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করবেনতাকে কোন কাজ করতে হবে না বা পরিবারের ব্যয়ভার বহন করার জন্য স্বামীর সাথে শরীক হতে হবে না, যেমনটা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বিবাহের পূর্বে যত সম্পত্তির মালিক ছিলেন বিবাহের পর তা সংরক্ষণ করার অধিকার রাখেন তার সম্পত্তির মালিকানা লাভের কোন অধিকার স্বামীর নেইএকইভাবে কন্যা অথবা বোন হিসেবেও নারীর সমস্ত ব্যয় বহন করা তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া পিতা অথবা ভাইয়ের দায়িত্ব

নারীদেরকে তাদের অধিকার প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নারীরা পুরুষদের দাস নন, এবং মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি পেতে বা সম্মান অর্জনের জন্য তাদের জীবনে পুরুষের ভূমিকা পালন করারও প্রয়োজন নেই ইসলামে নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে তৈরি


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন