আপনাকে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসেনি কেহ অবনি পরে
সকলের তরে সকলি আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে॥
বীমা কোম্পানি বা বীমার লোকদের নিয়ে নানা কথা থাকতে পারে, কিন্তু বীমার কনসেপ্ট যে খারাপ তা কেউ বলতে পারবে না; বরং সমবায় চেতনার মহৎ উদ্দেশ্য ধারণ করেই বীমার ধারণাটি গড়ে উঠেছে।
সহজভাবে বললে বীমা বলতে বুঝায় একের বিপদে সকলের এগিয়ে আসা।কেননা, আমরা জানি, কোন জীবন বীমার গ্রাহক দুর্ঘটনায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলে বীমা কোম্পানি গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ দেয়, কিস্তি বা প্রিমিয়াম মওকুফ করে দিয়ে মাসে অর্থ সাহায্য করে, এককালীন অর্থ প্রদান করে ইত্যাদি।আবার কোন গ্রাহকের যদি মেয়াদ পূর্তির আগেই মৃত্যু হয় তাহলে তার পরিবারকে বীমা অংকের সম্পূর্ণ টাকাই লাভসহ প্রদান করে থাকে।এমনকি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তো বীমা অংকের দ্বিগুণ অর্থ প্রদান করে থাকে।ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার এই সুবিধাটা কিন্তু ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদান করে না।
এখন প্রশ্ন হলো, জীবনবীমা বা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গ্রাহককে এই অতিরিক্ত টাকাটা কোথা থেকে দেয়? দেখা গেল, একজন গ্রাহক হয়তো ১০ বছর মেয়াদে ৫ লাখ টাকার একটা মেয়াদী পলিসি ক্রয় করে মাত্র ১টা প্রিমিয়াম দিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে অথবা মারা গেছে, এখন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পািনি ঐ গ্রহকের সকল প্রিমিয়াম মওকুফ তো করবেই, তাকে বীমা অংকের ৫ লাখের সম্পূর্ণ টাকা প্রদান করবে, এমনকি দ্বিগুণ অর্থও প্রদান করবে।এই বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা কোম্পানি কোথা থেকে প্রদান করে?
আসলে এই টাকাটা দেয়া হয় 'লাইফ ফান্ড' থেকে যার প্রায় নব্বই শতাংশ আসে সকল গ্রাহকদের পকেট থেকে, আর মাত্র ১০% আসে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের পকেট থেকে।
লাইফ ফান্ড কী?
গ্রাহকরা যখন কোন লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি ক্রয় করে তখন তারা মোট বীমা অংকের তুলনায় কিছু অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে থাকে।এই অতিরিক্ত অর্থই জমা হয় লাইফ ফান্ডে।প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বীমার গ্রাহক হয়ে লাইফ ফান্ডে টাকা জমা করছে।যার কারণে প্রায় প্রতিবছরই কোম্পানির লাইফ ফান্ডের টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।সুতরাং গ্রাহকের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করতে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আসলে কোন বেগ পেতে হয় না।তারা ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহককে সাহায্য করে মূলত অন্য সকল গ্রাহকের টাকা দিয়ে।এটি মূলত একটি ভাল কাজে সকলের অংশগ্রহণ, যা প্রাতিষ্ঠানিক
উদ্যোগের কল্যাণে আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে; তা নাহলে এই কাজটি ব্যক্তিগতভাবে করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পরতো।বীমা করা থাকার কারণে একটি পরিবার তাদের বিপদের সময়ে যে বিশাল সাপোর্ট পায় তার তুলনায় একজন গ্রাহকের প্রদানকৃত অতিরিক্ত অর্থ নিতান্তই তুচ্ছ। একারণেই বলা হয়-
দশের লাঠি একের বোঝা
দশে মিললে কাজ সোজা
সুতরাং লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিয়ে আমাদের বদ্ধমূল ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন।এটি আসলেই একটি ভাল কাজ, সামাজিক কাজ যা সমাজের মানুষের মধ্যে দায়িত্বশীলতার অনুভূতি তৈরি করে এবং মানবসেবায় এগিয়ে আসতে সাহায্য করে।কারণ যারা বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায় মহান আল্লাহ তাদের বেশি পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর প্রশংসায় বলেছেন, ‘আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকার পরও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিদের খাবার খাওয়ায়।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৮)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, সে-ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।’ (আল মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৫৭৮৭)।
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কেয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (এ ফাঁকে) ঢোকালেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০২৬)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন