সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সমাধান


 

বয়ঃসন্ধিকাল: যৌবনের উন্মেষ ও বিকাশ

বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty) হল যৌবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাল। কৈশোর থেকে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত সময়কালকে কৈশোর কাল বা বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। ইংরেজিতে এই সময়টাকে teenage বা adolescents বলা হয়। মূলতঃ কৈশোর কালেই যৌবনের উন্মেষ হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বিকশিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ যৌবনপ্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। সাধারণভাবে ১০ থেকে ১৯ বছরের বয়সকালটাকেই কৈশোরকাল ধরা হয়। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর সময়কে early adolescents  এবং  old adolescents বলা হয়।

এটি শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী অবস্থা। এ সময় জুড়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এবং আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে নিষ্ক্রিয় থাকা হাইপোথ্যালামাস এসময় হঠাৎ কওে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত ডোপামিন, গ্লুটামেট ও সেরেটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন এই আবেগীয় পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং গ্রোথ হরমোন কৈশোরকালীন শারীরিক বিকাশ ও যৌন আচরণকে সক্রিয় করণে কাজ করে। ভৌগলিক অবস্থান ভেদে কৈশোর কালের ব্যাপ্তির তারতম্য দেখা যায়।


বয়ঃসন্ধি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে (ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়) হরমোন সংকেত যাবার মাধ্যমে এটির সূচনা ঘটে। ফলশ্রুতিতে গোনাড বিভিন্ন ধরনের হরমোন উৎপাদন শুরু করে যার ফলে মস্তিষ্ক, অস্থি, পেশি, ত্বক, স্তন, এবং জনন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহের বৃদ্ধি শুরু হয়। বয়ঃসন্ধির মধ্যভাগে এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং বয়ঃসন্ধি শেষ হবার মাধ্যমে এই বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরুর পূর্বে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় সম্পূর্ণটাই বলতে গেলে শুধু যৌনাঙ্গের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। বয়ঃসন্ধির সময়, শরীরের গঠনের আকার-আকৃতি, গুরুত্ব ও কাজে প্রধান পার্থক্যগুলো প্রতীয়মান হয়। এদেও মধ্যে খুবই অবশ্য সম্ভাবী পরিবর্তনগুলোকে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বলা হয়।

আসলে যৌবনের যা কিছু জৌলুস, ঐশর্য্য, শক্তি, সামর্থ্য বা প্রাচুর্য তার সবকিছুরই ভিত্তিভূমি হল এই বয়োঃসন্ধিকাল বা কৈশোর কাল। মানুষের শরীর এবং মন-মানসিকতায় যৌবন প্রাপ্তির জন্য এই সময় থেকেই সমস্ত যোগান আয়োজন চলতে থাকে।তাই এই সময়টা মানুষের জীবনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সময়।এই সময়ে সুস্থ থাকা প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

কিন্ত আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনজনিত আবেগের তীব্রতার কারণে এ সময় তরুণ-তরুণীদের মনে অত্যন্ত চিত্তচাঞ্চল্য বিরাজ করে এবং বেশ কিছু সাধারণ (common) স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয় যেগুলোর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। এ প্রসঙ্গে এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের দিকে দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে:

২০১৫ সালে আনুমানিক ১.২ মিলিয়ন বা বারো লক্ষেরও বেশি টীনএইজ ছেলে-মেয়ে মারা যায়, আর প্রতিদিন মারা যায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি। আর এসব মৃত্যুর বেশির ভাগই ছিল প্রতিরোধযোগ্য অথবা চিকিৎসাযোগ্য।

২০১৫ সালে কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জখম। এছাড়া অন্যান্য প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া, আত্মহত্যা, ডায়রিয়া রোগ এবং ডুবে যাওয়া।

বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও শিশুজন্ম দান

বয়স্কদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রায় অর্ধেক রোগ ১৪ বছর বয়সে শুরু হয়ে যায, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি অবহেলার কারণে অচিহ্নিত থেকে যায় এবং এর কোন চিকিৎসা বা প্রতিকার করা হয় না।

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ বা প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জন কৈশোর কাল বা বয়োঃসন্ধি কালে অবস্থান করে যাদের বয়স ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যকার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবান, তবে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অকাল মৃত্যু, অসুস্থতা এবং ইনজুরির শিকার হচ্ছে। এসব অসুস্থতা তাদের বৃদ্ধি এবং পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে।

এখানে কৈশোরকালের প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

অকাল গর্ভধারণ এবং শিশুজন্ম

১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ অকালগর্ভাবস্থা এবং শিশুজন্মের জটিলতা। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১% শিশুর জন্ম দেয় ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েরা এবং এই জন্মের অধিকাংশই হয় নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশ থেকে। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, তাই বাল্য বিবাহ ও অকাল গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। আর যেসব বালিকারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তাদের গর্ভকালীন বিশেষ যতেœর প্রয়োজন।

যৌনরোগ/এইচ আই ভি

উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হচ্ছে যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়া। সঙ্গদোষ, খারাপ পরিবেশ, অশ্লীল বা পর্ণোছবি, পারিবারিক শৃংখলার শিথিলতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, নৈতিক অধঃপতন, ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশা ও অবৈধ যৌণাচার বা জেনা-ব্যাভিচার, ধর্ষণ, সমকামিতায় লিপ্ত হলে নানা ধরনের যৌনরোগ এমনকি মরনব্যাধী এইচ আই ভি বা এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই বয়সে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণ হল, এই সময়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যে কোন বিষয়ে কৌতুহল এবং আবেগ-উদ্দাম-অস্থিরতা বেশি থাকার কারণে তাদের আত্মসংযম বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও হিতাহিত জ্ঞান কম থাকে। তাই এই সময়টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২ মিলিয়নেরও বেশি কিশোর কিশোরী এইচআইভি ভাইরাস বহন করে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০০৬ সালের পর থেকে এইচআইভি সংক্রামিত মৃত্যুর মোট সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসলেও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এইচআইভি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

অন্যান্য সংক্রামক রোগ

শৈশব টিকা ব্যবস্থার উন্নতির কল্যাণে কিশোর মৃত্যু এবং হামের কারণে সৃষ্ট অক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে ডায়রিয়া এবং lower respiratory tract infections-(LRTI) বা নিওমোনিয়াকে এখনো ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের জন্য অন্যতম শীর্ষ ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার মতে এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের মৃত্যুর জন্য এই দুটো রোগ শীর্ষ ৫ কারণের মধ্যে অন্যতম। এই দুটো রোগের সাথে meningitis বা মস্তিষ্ক ঝিল্লীর প্রদাহ যোগ হলে শীর্ষ ৩ কারণ বলে গণ্য করা হয়। আফ্রিকার নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এসব রোগের প্রকোপ বেশি।

মানসিক-সাস্থ্য সমস্যা

বিষণœতা হল কৈশোর কালের অসুস্থতা ও নানাবিধ অক্ষমতার (disability) তৃতীয় প্রধান কারণ। আর আত্মহত্যা হল ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ।

সহিংসতা, দারিদ্র্য, অপমান এবং অবমূল্যায়ন অনুভূতি বা হীনমন্যতা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে প্রকট করে তুলতে পারে।

শিশু এবং কিশোর বয়সে জীবন দক্ষতা (life skills)) গড়ে তোলা এবং স্কুল ও অন্যান্য সামাজিক পরিবেশ গুলোতে তাদেরকে মানসিক সাপোর্টে দিয়ে তাদের মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি করা যায়।

জীবন দক্ষতা হল যে কোন পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার এবং ইতিবাচক আচরণেরক্ষমতা বা দক্ষতা, যা মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলির সাথে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম করে তোলে।অন্য কথায়, মনোসামাজিক পারদর্শিতা বা সক্ষমতা।

এগুলো হল শিক্ষা বা সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত মানবিক দক্ষতাগুলির একটি সমষ্টি যা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন সাধারণ সমস্যা ও প্রশ্নের মোকাবেলায় ব্যবহার করে থাকে।

কিশোর-কিশোরীদের এবং তাদের পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার উপযোগী কর্মসূচিগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের উপযুক্ত ও যতœশীল স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা সনাক্ত করা এবং পরিচালনা করা উচিত।

মদ ও মাদকাসক্তি

কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ক্ষতিকারক পানীয়ের ব্যবহার বেশিরভাগ দেশে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে হ্রাস করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধি করে, যেমন অনিরাপদ যৌনতা এবং বিপজ্জনক ড্রাইভিং।

এটি তাদের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া বা ইনজুরির একটি প্রধান কারণ, এছাড়া সহিংসতা (বিশেষ করে কোন পার্টনার দ্বারা) এবং অকাল মৃত্যু। এগুলো (মাদকাসক্তি, যৌনরোগ এবং ইনজুরি) টিনএজ ছেলেমেয়েদের পরবর্তী জীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবন-প্রত্যাশার উপর নেতিবাচক প্রভাবিত ফেলতে পারে। একইভাবে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ড্রাগের ব্যবহারও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যা।

ইনজ্যুরি

দুর্ঘটনাজনিত ইনজুরি টিনএজ ছেলেদের মৃত্যু এবং অক্ষমতার একটি প্রধান কারণ। ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে ১ লক্ষ ১৫ হাজারেরও বেশি তরুণের মৃত্যু হয়।আগেই বলা হয়েছে, তরুণদের মধ্যে বয়সজনিত চিত্তচাঞ্চল্য ছাড়াও মাদকের প্রভাবে বেপরোয়া ড্রাইভিং ও সহিংসতা বা মৃত্যুঝুঁকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সমাজকে মাদকমুক্ত করা একান্ত অপরিহার্য। তানাহলে ইনজুরিজনিত অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হাত থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করার আর কোন আশা নাই।

অপুষ্টি ও স্থূলতা

উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের আরেকটি সাধারণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি হল অপুষ্টি এবং স্থূলতা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেক ছেলে ও মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগে এবং সহজেই রোগ-শোকের শিকার হয়ে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

অন্যদিকে, অল্প, মধ্য ও উচ্চ-আয়ের দেশে বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীরা অতিভোজনের কারণে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারায়। আসলে অপুষ্টি আর অতিরিক্ত পুষ্টি উভয়ই স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ব্যায়াম এবং পুষ্টির অভাব

আয়রন ঘাটতি জনিত অ্যানিমিয়া কয়েক বছর ধরে কিশোর কিশোরীদের মৃত্যু এবং অক্ষমতার শীর্ষ কারণ হিসেবে বিরাজ করেছে এবং ২০১৫ সালেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।

এক্ষেত্রে আয়রন এবং ফোলিক অ্যাসিডের সম্পূরক ব্যবহার একটি সমাধান হতে পারে যা বয়ঃসন্ধি অথবা যৌবনকালে পিতা-মাতা হওয়ার আগে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সাহায্য করবে।

আয়রন সহ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হৃাসের জন্য দায়ী হল ক্রিমিরোগ, যেমন অন্ত্রের মধ্যে থাকা হুকওয়র্ম, নিয়মিত এগুলোকে নির্মূল করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা হলো তরুণ বয়সের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মূল ভিত্তি। উচ্চ স্যাচুরেটেড চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড, ফ্রি সুগার, বা লবণ খাওয়া হ্রাস করা এবং সুস্থ খাবার ও কায়িক পরিশ্রমের কার্যকলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করা সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে বিশেষ করে শিশু ও টিনএজ ছেলে-মেয়েদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অথচ, প্রাপ্ত জরিপের তথ্য সমূহও নির্দেশ করে যে, প্রতি ৪ জন টিনএজ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ১ জনেরও কম শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রস্তাবিত নির্দেশনা পূরণ করে; তা হলো: প্রতিদিন ৬০ মিনিট মাঝারি থেকে জোরালো কায়িক পরিশ্রম করা।

তামাক ব্যবহার

সমাজের অধিকাংশ লোক যখন তামাকের ব্যবহার করছে, তার প্রভাব তরুণ-তরুণীদের উপরও পড়ছে এবং উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজ তামাকে আসক্ত। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, বিশ্বের প্রতি ১০ জন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অন্তত একজন ধূমপানে আসক্ত।

বলাবাহুল্য এই আত্মঘাতি বিষপান তরুণদের স্বাস্থ্যের উপর অত্যন্ত মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং তাদের কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও বিকাশকে ব্যাহত করছে।

শুধু তাই নয়, ধূমপানের ফলে তাদের শরীরে মারাত্মক রোগ বাসা বাঁধে যার সুদূর প্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের পরবর্তী জীবনেও। তাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়ানো, তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইয়ুথ হেলথ ফ্রেমওয়ার্ক (AIHW, 2007) অনুযায়ী যেসব উপাদান বা প্রভাবক (Factors) স্বাস্থ্য ও যুবকল্যাণকে প্রভাবিত করে সেগুলো হল:

পরিবেশগত উপাদান সমূহ (Environmental factors)

আর্থ-সামাজিক উপাদান সমূহ (Socio-economic factors)

কমিউনিটির সক্ষমতা (Community capacity)

স্বাস্থ্য আচরণ (Health behaviours)

ব্যক্তি সম্পর্কিত বিষয় সমূহ (Person related factors)

উপসংহার

এই বয়সে তরুণদের মধ্যে একদিকে বাধনহারা কৌতুহল কাজ করে, যে কারণে তারা সহজেই সবকিছুর প্রতি কৌতহল বোধ করে। এই সময় তাদের এই কৌতুহল যদি জ্ঞান-বিজ্ঞান, খেলাধূলা সহ ইতিবাচক বিষয়গুলোর প্রতি আকৃষ্ট করা যায়, তাহলে যেমন তার নিজের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়, সেই সাথে দেশ, জাতি ও সভ্যতার উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়।

কিন্তু তারুণ্যের এই দুর্দান্ত কৌতুহলের সামনে যদি কোন ভাল দৃষ্টান্ত না থাকে তাহলে অনিবার্যভাবে তাদের কৌতুহল নেতিবাচক ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি ধাবিত হয়।

দুর্দমনীয় কৌতুহল ও অনিয়ন্ত্রিত আবেগ এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ জিনিসের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এবং সঙ্গ দোষের কারণে তারা অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মাদক, পর্ণো সহ নানাবিধ নেতিবাচক আচরণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। আবার আবেগের প্রাবল্যের কারণে তারা অনেক সময় সামান্য কারণেই হতাশাগ্রস্থ হয়েও এসবে সম্পৃক্ত হয় এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা সহ নানাবিধ মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এ অবস্থার পেছনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলো গুরুতর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে। এ কারণেই বলা হয়, বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণগুলোর বেশিরভাগই জৈবিকতার চেয়ে মনোসামাজিক (psychosocial)।

এছাড়াও ক্ষতিকর বিষয় সমূহ বা ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষার দক্ষতার অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পাশাপাশি তাদের সমস্যাগুলো থেকে উদ্ধার পেতে কিভাবে এবং কোথায় সাহায্য পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবও একটি বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে যথাযথ হস্তক্ষেপ করতে পারলে পরবর্তীতে অনেক বড় সমস্যা থকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

সূত্র: যৌবনের যত্ন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন